ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতা-উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১২ জুন ২০২৫

সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ভাতা-উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে

সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে

প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিয়েছি।’

সেই অনুযায়ী, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর চলমান বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী ও ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী ৬০ লাখ ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬১ লাখ করা হচ্ছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার জন বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২৯ লাখ। 
একইভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী খাতে সুবিধাভোগী ৯৪ হাজার, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের সুবিধাভোগী ২ লাখ এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী ১ লাখ ১৬ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা দুই লাখ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী ৯ লাখ ৯০ হাজার, ওএমএস সুবিধাভোগী ১১ লাখ ৪৭ হাজার, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগী ৩ লাখ ৩৭ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
এ প্রসঙ্গে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কিছু সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এটা প্রশংসনীয়। যেসব কর্মসূচির মাধ্যমে এত বছর গোঁজামিল দেওয়া হচ্ছিল, সেগুলোর কিছু এবার বাদ পড়েছে। আবার কিছু কর্মসূচি রয়েও গেছে। যেমন পেনশন কোনোভাবেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়। সেলিম রায়হান আরও বলেন, ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে (এনএসএসএস) উপকারভোগী নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, দ্বৈততা দূর, অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের সুপারিশ ওঠে এসেছিল। এগুলো বাস্তবায়ন করলেও এ খাতের সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে শুরু করে পেনশন বাবদ বরাদ্দকেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হতো। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদকে এ খাত থেকে বাদ দিয়েছে। এছাড়া সংস্কারের অংশ হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক ধাক্কায় কর্মসূচির সংখ্যা ৪৫টি কমিয়ে ফেলেছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০ থেকে কমিয়ে ৯৫ তে নামিয়ে আনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করে আসছিলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছিল। 
পেনশন বাবদ বরাদ্দের কথাও বাজেট বক্তব্যে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। পেনশন ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।’ পেনশন বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ খাতে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মান অনুযায়ী, একটা দেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত জিডিপির ৫ শতাংশ।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ বরাদ্দ কমিয়ে ১ লাখ ২ হাজার ১২৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন ব্যাখ্যা দিয়ে আসছিলেন যে মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে। ফলে এটাও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ।

×