
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইরানের বিভিন্ন স্থানে ২০০-র বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে একযোগে হামলা চালায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন দেশটি। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের অন্তত ১০০টি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। তেহরানসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র সাইটগুলো ছিল প্রধান টার্গেট।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান, মিসাইল ও আকাশপথে অভিযানের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫, এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান একযোগে ইরানের আকাশসীমা অতিক্রম করছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলায় মোট ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়, যা দেশটির বিমান বহরের প্রায় ৬০ শতাংশ। তাদের বিমান বহরে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৩৪০টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে অন্তত ৩৯টি এফ-৩৫ মডেলের। এ বিমানগুলো প্রস্তুত করেছে মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি সংস্থা লকহিড মার্টিন।
একইসঙ্গে, আকাশ থেকে ইরানে নিক্ষেপ করা হয়েছে অন্তত ৩৩০টি মিসাইল। এসব মিসাইলের বেশিরভাগই ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদে সক্ষম বলে জানানো হয়।
ইরানের প্রতিরক্ষা দুর্বল, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী
ইরানের কাছে রয়েছে প্রায় ৩০০টির মতো যুদ্ধবিমান, যার অধিকাংশই পুরনো রুশ মডেলের সুখোই ও মিগ। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ইরান নিজেদের তৈরি খোরদাদ ও বাবর সিস্টেমের পাশাপাশি রাশিয়ার সরবরাহকৃত এস-৩০০ সিস্টেম ব্যবহার করে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কাছে রয়েছে আয়রন ডোম, ডেভিড স্লিং ও অ্যারো থ্রি-এর মতো অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের প্রকৃত শক্তি তার বিশাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ভাণ্ডারে। দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) হাতে রয়েছে শতাধিক মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল, যেগুলোর পাল্লা এক হাজার কিলোমিটারের বেশি এবং একেকটি ১২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। এসব মিসাইল ইসরায়েলে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় নেয়।
ইরানের পাল্টা জবাবের হুমকি
ইরানে হামলার পরপরই দেশটির ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েল সিংহের লেজে পা দিয়েছে এবং এর জবাব হবে “কল্পনাতীত”। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান হয়তো সরাসরি না গিয়েও সিরিয়া, লেবানন কিংবা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলকে টার্গেট করতে পারে। কারণ ইরানের হাতে রয়েছে শক্তিশালী মিসাইল নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার কৌশল।
এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা শুধু ইসরায়েল-ইরান নয় বরং গোটা বিশ্বের ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ইমরান