ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আনোয়ারায় আটকে পড়া কয়লাবাহী জাহাজে হুমকিতে শতবর্ষী মসজিদ, মাদ্রাসা ও বেড়িবাঁধ

ইমরানুল হক, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:৫০, ১৪ জুন ২০২৫

আনোয়ারায় আটকে পড়া কয়লাবাহী জাহাজে হুমকিতে শতবর্ষী মসজিদ, মাদ্রাসা ও বেড়িবাঁধ

ছবি: জনকণ্ঠ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে প্রবল স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উঠান মাঝি ঘাট এলাকায় তীরে এসে একটি মসজিদের কূলঘেঁষে আটকে পড়ে কয়লাবাহী টাগবোট নাভিমার-৩  ও বার্জ মারমেইড-৩ নামের বিশালাকৃতির দুটি জাহাজ। আটকে থাকা জাহাজ দুটি এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেড়শ বছরের পুরোনো মসজিদ, কবরস্থান, এতিমখানা ও বেড়িবাঁধসহ আশপাশের শতাধিক পরিবার।

জানা গেছে, গত দুই বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজের জন্য এমভি নাভিমার-৩ বার্জযোগে ভারত থেকে বড় আকৃতির পাথর আনা হয়। এরপর আইনি জটিলতায় সৃষ্টি হওয়ার পর মালিকপক্ষ এর জ্বালানি সরবরাহের কোনো বিল প্রদান করেনি। এসব ঘটনা নিয়ে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এরপর নাভিমার-৩ থেকে ও মারমেইড-৩ নৌযান দুটো বহির্নোঙরে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গত ৩০ মে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় হওয়ার কবলে পড়ে নোঙর ছিঁড়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে উঠে আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাজ দুটি মসজিদ ঘেঁষা কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জাহাজের সৃষ্ট ঢেউয়ে ইতোমধ্যে মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের জিও ব্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতবছর পুরোনো কবর থেকে উঠে এসেছে কঙ্কাল। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যেও।

স্থানীয় বাসিন্দা হেমন্ত জলদাস জানান, জাহাজ দুটি যখন ভিড়ছিল, আমি নিজেই দেখেছি। জাহাজের কারণে আশপাশের প্রায় ১০০ ফুট এলাকার মানুষ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। কবরস্থান ধসে পড়ে কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। মসজিদ ও এতিমখানা এখন বিলীনের পথে। জাহাজটি এখানেই অনেক  বড় গর্ত তৈরি করে ফেলেছে, যে কোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত জাহাজ দুটি সরিয়ে নেওয়া হোক।

স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক জানান, আমরা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জাহাজে থাকা লোকজন নিজেরাই সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেই দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

এদিকে কোস্ট গার্ড সাঙ্গু স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, জাহাজ দুটি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এগুলো সরানোর জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী ও ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন মহল বলছেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আনোয়ারার এই ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনাটি ও শত বছরের কবরস্থান চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

সাব্বির

×