ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বাবার ভালোবাসা মুখে নয়, লেখা থাকে প্রতিটি সংগ্রামে

মোঃ রিজভী আহম্মেদ রিজোয়ান, নওগাঁ

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ১৫ জুন ২০২৫

বাবার ভালোবাসা মুখে নয়, লেখা থাকে প্রতিটি সংগ্রামে

ছবিঃ সংগৃহীত

বাবা দিবস কেবল একটি দিন নয়—এটি আমাদের উপলব্ধির দিন। একটি সুযোগ—বাবাকে বলা, “তোমার কষ্ট বুঝি, বাবা তুমি যা কিছু করেছো আমার জন্য, আমি ভুলে যাইনি।”

ছোটবেলায় বুঝতাম না, কেন বাবা ঈদের নতুন জামাটা নিজের জন্য না কিনে শুধু আমাদের জন্য আনতেন। কেন বাবা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এক কাপ চা খেয়েই আবার কাজে বেরিয়ে যেতেন, শুধু এই বলে—"বাড়ির বাজারটাও করে নিয়ে আসি।" তখন জানতাম না, ওটাই ভালোবাসা। নিঃশব্দ, নিরব, অথচ সমস্ত বিসর্জনের নাম—বাবা।

আজ যখন একটু বুঝি, দেখি—আমার প্রতিটি অর্জনের পেছনে আছে বাবার অগণিত পরিশ্রম, ত্যাগ আর নিঃস্বার্থ অপেক্ষা। তিনি কখনোই নিজের জন্য কিছু চান নি , শুধু চেয়েছেন আমি যেন একদিন তাঁর চেয়ে একটু ভালো মানুষ হতে পারি।

আমরা যখন বাবার কাঁধে চড়ে মেলা ঘুরে বেড়াতাম, তখন সেই কাঁধে ছিল পরিবারের দায়িত্বের ভার, ছিল শত অভাব-অনটনের বোঝা। তবুও সে কাঁধ কেঁপে ওঠেনি, ক্লান্তির কোনো ছায়া পড়েনি মুখে। কারণ তিনি জানতেন—এই কাঁধই তাঁর সন্তানের আস্থার শেষ ঠিকানা।

বাবারা খুব সাধারণ জীবন কাটান, অথচ তাঁদের অসাধারণতা আমরা বুঝি তখন, যখন তাঁরা ধীরে ধীরে চুপচাপ হয়ে যান। হয়তো একদিন সকালে উঠে দেখি, বাবার গায়ে আগের মতো জোর নেই, চোখে চশমা, পায়ে ধীর গতি—তখন বুকটা হাহাকার করে ওঠে। মনে হয়, আহ্‌! আরও একটু সময় যদি তাঁকে দিতে পারতাম! আরও কিছু কথা যদি বলা যেত—"তোমার মতো আর কেউ হয় না বাবা।"

বাবা দিবসে উপহার দেওয়া যায়, ছবি পোস্ট করা যায়, কিন্তু বাবার জন্য সত্যিকারের শ্রদ্ধা হলো—তাঁর জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে মনে রাখা, তাঁর জীবিত উপস্থিতিকে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, অনেকেই আছেন, যাঁরা আজ আর বলতে পারেন না “বাবা” ডাকটা—ডাকটি আটকে যায় গলার গভীরে, চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসে স্মৃতি।

আজকের এই দিনে শুধু বলি—“বাবা, তুমি যদি একবার জানতে, তোমার নীরব ভালোবাসা কীভাবে আমার জীবনটা গড়ে দিয়েছে, তাহলে তোমার মুখে আমি সেই হাসিটা দেখতে পেতাম—যেটা আমি কখনও দেখাতে পারিনি। তুমি আমার প্রথম আশ্রয়, আমার শেষ প্রেরণা।আজ  যদি একটিবারও বাবার চোখে চোখ রেখে বলতে পারি—“তুমি আমার জীবনের নায়ক, আমার সাহস, আমার গর্ব”—তবেই এই দিনটির পূর্ণতা আসে।

বাবারা একদিন বুড়ো হয়ে যান, হাত কাঁপে, পা চলে না ঠিকঠাক। তখন যেন আমরা সন্তান হিসেবে তাঁদের সেই নির্ভরতার ছায়া হয়ে দাঁড়াতে পারি—যেমনটা ছোটবেলায় তিনি ছিলেন আমাদের জন্য।

শেষবারের মতো, সব বাবাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাঁরা নিজেরা অন্ধকারে থেকেও সন্তানের জীবনে আলো হয়ে আছেন। বাবা দিবসে একটিবার বাবার হাতটা ধরুন, আর বলুন—"তোমার মতো আর কেউ নেই বাবা।"

উৎসর্গ : আমার বাবা মোঃ বকুল হোসেন সহ পৃথিবীর সকল বাবাদেরকে। 
 

আলীম

×