ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

টাইপরাইটারের শেষ কষ্টগাথা: এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান

মেহেদী হাসান সেতু, কান্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৫ জুন ২০২৫

টাইপরাইটারের শেষ কষ্টগাথা: এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান

একসময় যান্ত্রিক শব্দে মুখরিত থাকত পঞ্চগড়ের অফিস-আদালতগুলো। টাইপরাইটারের টকটক শব্দ ছিল কর্মচাঞ্চল্যের অনন্য পরিচায়ক। সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের অধিকাংশ কাজ চলত এই যন্ত্রেই। কিন্তু সময়ের স্রোতে প্রযুক্তির উন্নয়নে বিলুপ্ত হয়ে গেছে টাইপরাইটার, হারিয়ে গেছে টাইপিস্টদের ব্যস্ততা আর কানে বাজা সেই চিরচেনা শব্দ।

পঞ্চগড় জেলার প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে উপজেলা কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা আদালত—সর্বত্র টাইপরাইটারের রাজত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। টাইপিস্টরাও ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একটি নথি টাইপ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতেন তারা। বিশেষ করে ভূমি অফিস, আদালত ও পুলিশ প্রশাসনে টাইপরাইটারের ব্যবহার ছিল অপরিহার্য।

দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ টাইপিস্ট মোঃ আব্বাস আলী (৭৮) বলেন, সেই সময় আমাদের খুব কদর ছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টাইপ মেশিন নিয়ে বসে থাকতে হতো। তখন কম্পিউটার ছিল না, টাইপই ছিল ভরসা। এখন কেউ আর খোঁজও নেয় না।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর প্রিন্টার দপ্তরে প্রবেশ করল, তখন ধীরে ধীরে টাইপরাইটারের ব্যবহার কমতে থাকে। নতুন প্রজন্ম টাইপরাইটার দেখেইনি বললেই চলে। সরকারি নীতির পরিবর্তন ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতিতে টাইপরাইটারের জায়গা দখল করে নেয় আধুনিক প্রযুক্তি।

পঞ্চগড় আদালতের একসময়ের টাইপিস্ট মোঃ আলী হোসেন (৭৯) বলেন, টাইপরাইটার যুগ অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছি। এখন ডিজিটাল ফাইল, স্ক্যান, ইমেইলেই কাজ হয়। তবে টাইপরাইটার যুগ ছিল নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।

বর্তমানে অনেক পুরনো টাইপরাইটার হয়তো পড়ে আছে কোনো পরিত্যক্ত কোণায়—ধুলোমাখা, অব্যবহৃত। কেউ কেউ এসব যন্ত্র সংগ্রহ করে রেখেছেন স্মৃতি হিসেবে। তবে টাইপিস্ট পেশাটি আজ হারিয়ে গেছে। নেই সেই কদর, নেই সেই কর্মচাঞ্চল্য।

টাইপরাইটার এখন শুধুই ইতিহাস, একটি যুগের সাক্ষী। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই যন্ত্র স্মৃতির বুকে বেঁচে থাকবে—সেই দিনগুলোর স্মারক হয়ে।

ফরিদ 

×