
ছবি: সংগৃহীত
১৯ শতকের শেষভাগ থেকে ২০ শতকের শুরুর দিকে, শতাধিক ধনী মার্কিন নারী নিজেদের বিপুল সম্পদ নিয়ে প্রবেশ করেন ব্রিটিশ অভিজাত সমাজে। ইতিহাসে তারা পরিচিত ‘ডলার প্রিন্সেস’ নামে—যারা অর্থের বিনিময়ে পেতেন পদবি আর সামাজিক মর্যাদা, আর ব্রিটিশ লর্ডরা পেতেন বিপদে পড়া প্রাসাদ রক্ষার জন্য দরকারি টাকা।
এই বাস্তব ঘটনাগুলোই অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে Apple TV+ এর জনপ্রিয় ড্রামা সিরিজ "The Buccaneers" তৈরির পেছনে। সিরিজটির প্রথম সিজন ব্যাপক সাড়া ফেলার পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে দ্বিতীয় সিজন, যেখানে ১৯ শতকের শেষদিকে মার্কিন ধনকন্যাদের ব্রিটিশ অভিজাত সমাজে ঢুকে পড়ার গল্প আরও গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সিরিজটিতে একদিকে রয়েছে প্রেম, প্রতারণা ও উচ্চবিত্ত সমাজের ভণ্ডামি, অন্যদিকে ফুটে উঠেছে নারীদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম এবং নিজের পরিচিতি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। এখানে ইতিহাসকে কিছুটা নাটকীয়ভাবে রূপায়ণ করা হলেও এর ভিত্তি সম্পূর্ণ বাস্তব।
সিরিজের পাশাপাশি লন্ডনের ঐতিহাসিক ক্যানউড হাউস (Kenwood House)-এ বর্তমানে চলছে একটি ব্যতিক্রমী শিল্পপ্রদর্শনী—"Heiress: Sargent’s American Portraits"।
এই প্রদর্শনীতে বিখ্যাত মার্কিন শিল্পী জন সিঙ্গার সার্জেন্ট আঁকা মার্কিন ধনকন্যাদের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। এই নারীরা কেউ ছিলেন ডিউকের স্ত্রী, কেউ ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, আবার কেউবা সংস্কৃতি-চর্চার পৃষ্ঠপোষক। চিত্রকর্মগুলো শুধু তাদের সৌন্দর্য নয়, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস, উচ্চাশা ও ব্যক্তিত্বকেও তুলে ধরেছে।
প্রদর্শনীর কিউরেটর ওয়েন্ডি মনকহাউস বলেন, “এই নারীরা শুধু বিলিয়ন ডলারের উত্তরাধিকারিণীই ছিলেন না, তারা ছিলেন সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ব্যক্তি—যারা রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন।”
১৮৭০ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ১০২ জন মার্কিন নারী—যাদের অন্তত ৫০ জন নিউইয়র্কের, বিয়ে করেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গ্ল্যামারাস সুন্দরী, কেউ ছিলেন সংস্কৃতিমনা বা রাজনৈতিক সচেতন।
সিরিজের পটভূমি ঠিক এমনই এক সময়, যেখানে নিউইয়র্কে ‘নতুন ধনী’ পরিবারগুলোকে অবজ্ঞা করে পুরাতন সমাজ। তখন এই তরুণীরা ইউরোপ পাড়ি দেন ব্রিটিশ সমাজে নিজেদের স্থান করে নিতে।
Kenwood House-এর কিউরেটর ওয়েন্ডি মনকহাউস বলেন, “এই নারীরা শুধু অর্থই নয়, সংস্কৃতি ও আধুনিকতারও প্রতীক ছিলেন।”
Apple TV+ সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনে সামাজিক প্রভাব, প্রেম ও নারীর ক্ষমতাবান হওয়ার নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। লেখিকা কাথরিন জেকওয়েজ বলেন, “এই মেয়েরা শুধু সুন্দর বা ধনী ছিলেন না, তারা অনেক বেশি শিক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ইংল্যান্ডে সেই সময়ের মেয়েরা যা হতে পারতেন না।”
এদের কেউ কেউ শুধু রাজ পরিবারের বউ হয়ে থেমে থাকেননি। ন্যান্সি অ্যাস্টর পার্লামেন্টে প্রবেশ করে নতুন ইতিহাস গড়েন, যেখানে তাকে উইনস্টন চার্চিলের মতো নেতাদের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়।
তবে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টও এই ধরণের বিয়ের বিরোধিতা করেন, বলেছিলেন “এই বিয়ে মানে মেয়েদের বিক্রি আর ছেলেদের টাইটেলের জন্য কেনা।”
Apple TV+ -এর এই সিরিজ কেবল ইতিহাস নয়, নারীর স্বাধীনতা, ভালোবাসা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার এক ব্যতিক্রমী গল্প। ইতিহাসের বাস্তব চরিত্রগুলোর ছায়ায় তৈরি এই ড্রামা আজকের নারীদের জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে।
মুমু ২