ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচনে’র রোডম্যাপ নিয়ে স্বস্তিতে বিএনপি

 সজীবুল ইসলাম সজীব,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,পাটগ্রাম,লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ১৫ জুন ২০২৫

নির্বাচনে’র রোডম্যাপ নিয়ে স্বস্তিতে বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ছিল বিএনপি। দলটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সংকট যেমন ঘনীভূত হয়, সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কও একটা বৈরী অবস্থার দিকে যেতে থাকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন অবস্থায় বহুল প্রতীক্ষিত লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট ও অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি এক ধরনের স্বস্তিও ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছুদিন ধরে চলা বিএনপির টানাপোড়ন মূলক সম্পর্কেরও অবসান ঘটেছে। সব মিলিয়ে বৈঠকের পর বিএনপি এখন দারুণ চাঙ্গা।

বিএনপি মনে করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। দুই পক্ষই সব প্রস্তুতি শেষে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনে সম্মত হওয়ায় দেশে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণায় যথাসময়ে উদ্যোগ নেবে এবং সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে, দেশ নির্বাচনমুখী হবে।

বিএনপি আরও মনে করে, জুলাই সনদ, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করা—এগুলো আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সম্ভব। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে বিচারে একটু সময় লাগলেও জুলাই সনদ এবং সংস্কার আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, ট্রাইব্যুনালে সেই মামলাগুলোর কয়েকটির রায়ও আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হওয়া সম্ভব। সুতরাং প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষে রোজার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানও সম্ভব।

বিএনপি নেতারা বলছেন,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের  বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট একটি বৈঠক।  ড. ইউনূস  তিনি তার আসন থেকে উঠে এগিয়ে গিয়ে তারেক রহমানকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের সৌজন্যতার পাশাপাশি সরকারের কাছে বিএনপির গুরুত্বের বিষয়টিও ফুটে ওঠে। এ ঘটনাসহ সার্বিকভাবে বৈঠক নিয়ে দারুণ খুশি দলটির নেতাকর্মীরা

বৈঠকের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে কে বলেন, লন্ডন বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী, জাতির প্রতি দিকনির্দেশনামূলক এবং বহুল প্রত্যাশিত। এই বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিকভাবে একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্ত ভিত্তি নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে একটি শক্তিশালী রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, পলিটিক্স ইজ এন আর্ট অব কম্প্রোমাইজ, অর্থাৎ রাজনীতি হলো একটি আপসের শিল্প। এ কথাটি আমরা অনুসরণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা অনুধাবন করেছেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আবহাওয়া, রমজান, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি, সেই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বৈঠকে রাষ্ট্র পরিচালনা, অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য, আলোচনা তো হয়েছেই। আমরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তিনি তার সেই অভিজ্ঞতা বিনিময় ও পরামর্শ প্রদানে সব সময় সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানান।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি গনমাধ্যম কে বলেন, লন্ডনে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো জাতি একটা উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের মধ্যে ছিল। বৈঠকের পর এখন সবার মধ্যে একটি স্বস্তি এসেছে। দেশে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এখন আমরা ইনশাআল্লাহ, সেই উৎসবে নির্বাচনী মাঠের দিকে যাব। সবাই মিলে তো দেশটাকে গড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের একটা বড় দায়িত্ব আছে। এখন পরবর্তী করণীয় কী, আশা করি সবাই সবার অবস্থান থেকে সেটা নির্ধারণ করে এগিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। সেখানে দু-একটি দলের কৌশলী কথাও এসেছে। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই ছোটখাটো কিছু জিনিসকে আমাদের সমন্বয় করে নিতে হবে। সংস্কার হবে, বিচার হবে, নির্বাচনও হবে।

ফারুক

×