ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

পটুয়াখালীর প্রাকৃতিক স্বর্গ ‘লেবুর চর’

মো.সাফায়েত রহমান আবির, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১৫ জুন ২০২৫

পটুয়াখালীর প্রাকৃতিক স্বর্গ ‘লেবুর চর’

পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই অবস্থিত একটি অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক স্থান লেবুর চর। স্থানীয়দের কাছে এটি নেম্বুর চর নামেও পরিচিত। নামে লেবুর চর হলেও এখানে কোনো লেবু গাছ নেই, বরং আছে নানান প্রজাতির গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যে ভরা এক মনোরম পরিবেশ। সুন্দরবনের অংশবিশেষ হওয়ায় এই চরের প্রকৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।  

প্রায় ১০০০ একর আয়তনের এই চরে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, গোরান, কড়ই, গোলপাতা সহ নানা প্রজাতির গাছ। একসময় এটি সুন্দরবনেরই অংশ ছিল, তবে এখন এটি মূল সুন্দরবন থেকে বিচ্ছিন্ন। লেবুর চরের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে সুন্দরবনের সবুজ গাছের সারি দেখা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনবদ্য দৃশ্য।  

সূর্যাস্তের সময় লেবুর চরের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। সূর্যের সোনালি আভা চরের সবুজ প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে, যা পর্যটকদের মনে এক অপার্থিব অনুভূতি জাগায়। লেবুর চর যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে কুয়াকাটার লেবুর চর যেতে হলে প্রথমে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার প্রধান দুটি উপায় হলো সড়কপথ ও নদীপথ।

সড়কপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার। ভ্রমণে সময় লাগে মাত্র ৬-৭ ঘন্টা (পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন সময়ও কম লাগে)।

নন-এসি বাসের মধ্যে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস (ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা)।  
এসি বাসের মধ্যে গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ (ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা) যাতায়াতে খরচ পড়বে।  সায়েদাবাদ, আবদুল্লাপুর, আরামবাগ বা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে যাত্রার টিকেট কিনে নিতে পারেন। 

এছাড়াও নদী পথে ঢাকার সদরঘাট নৌ টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালী বা বরিশালগামী লঞ্চে করে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সাধারণত সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে।  

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে লেবুর চর ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।  

যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখা যায়। ভ্যান বা ইজি বাইক ভাড়া করেও যাওয়া যায়। সকালে রওনা দিলে দিনেই ঘুরে কুয়াকাটায় ফিরে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন?
কুয়াকাটায় থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সরকারি আবাসনগুলোর মধ্যে রয়েছে— এলজিইডি রেস্ট হাউজ, সড়ক ও জনপথ রেস্ট হাউজ, রাখাইন কালচার একাডেমীর রেস্ট হাউজ।  

প্রাইভেট হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে: সাগর কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস, ইয়ুথ ইন হোটেল, হোটেল গ্রেভার ইন, সি ভিউ হোটেল, সিকদার রিসোর্ট, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল, ম্যানগ্রোভ হোটেল, পর্যটন মোটেল, হোটেল বীচ হ্যাভেন।   

কোথায় খাবেন?

লেবুর চরের আশেপাশে ছোট ছোট ফুড শপে তাজা সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া ভাজি পাওয়া যায়। কুয়াকাটায় ভালো খাবারের জন্য কিছু রেস্টুরেন্ট হলো— জিরো পয়েন্টে জয়, হোটেল সানরাইজ,  বার্মা হোটেল, রামজান রেস্তোরা, অতিথি ও বৈশাখী রেস্টুরেন্ট। 

ভ্রমণের আদর্শ সময়
নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত লেবুর চর ভ্রমণের আদর্শ সময়, কারণ এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য লেবুর চর একটি অসাধারণ স্থান। লেবুর চর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। কুয়াকাটার কোলাহল থেকে দূরে এই নির্জন চরে গেলে মনে হবে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে গেছেন। সুন্দরবনের অংশবিশেষ হওয়ায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। তাই সময় পেলে অবশ্যই লেবুর চরে ঘুরে আসুন!

রাজু

×