ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে কী কী উপকার পাবেন?

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৫ জুন ২০২৫

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে কী কী উপকার পাবেন?

ছবি:সংগৃহীত

যদি আপনি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার হেলথ ট্রেন্ডগুলো অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপেল সিডার ভিনেগারের (Apple Cider Vinegar বা ACV) কথা শুনেছেন। আপেল চিপে যে রস পাওয়া যায়, সেটিকে ফারমেন্ট করে এই টক-মিষ্টি ভিনেগারটি তৈরি করা হয়। ফারমেন্টেশনের ফলে এর স্বাদ বদলায়, এবং এটিতে কিছু পুষ্টিগুণ যোগ হয় বলে মনে করা হয়।

এই কারণেই এটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে হজম ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়। আজকাল এটি পানীয়, পাউডার, গামি বা ক্যাপসুলের মতো বিভিন্ন রূপে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, একে একে খেলে কি সত্যিই কোনো স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায়? আর এটি কি অন্যান্য ফারমেন্টেড খাবারের মতোই উপকারী? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি।

আপেল সিডার ভিনেগার কীভাবে তৈরি হয়
পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ডি রোবার্টিস ব্যাখ্যা করেন, আপেল সিডার ভিনেগার তৈরির প্রক্রিয়াটি দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, আপেলের রসের প্রাকৃতিক চিনি ইস্টের সাহায্যে অ্যালকোহলে পরিণত হয়। এরপর, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া সেই অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করে—এটাই হলো ভিনেগারের মূল উপাদান।

এই দ্বিতীয় ধাপে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিক গঠিত হতে পারে। তবে সব আপেল সিডার ভিনেগারে তা থাকে না। কাঁচা ও অফিল্টারড ভিনেগারে এরা থাকে, কিন্তু ফিল্টার করা বা পাস্তুরাইজড ভিনেগারে গরমে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

আপেল সিডার ভিনেগারের সম্ভাব্য উপকারিতা
সাধারণত অল্প পরিমাণে খাওয়া হয় বলে এর উপকারিতাও সীমিত হতে পারে। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এবং পরিমিতভাবে খাওয়া হলে এটি কিছুটা উপকার দিতে পারে:

১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে
ড. লরি রাইট বলেন, ছোটখাটো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগার সামান্যভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। এটি টোটাল কোলেস্টেরল ও এলডিএল ("খারাপ") কোলেস্টেরল কমাতে এবং এইচডিএল ("ভালো") কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এই উপকারের পেছনে মূল ভূমিকা রাখে অ্যাসিটিক অ্যাসিড।

তবে এই গবেষণাগুলোর বেশিরভাগই ছিল ছোট পরিসরে বা পশুর ওপর। তাই এখনো এটি চিকিৎসার অংশ হিসেবে সুপারিশ করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।

২. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করতে পারে
আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো কোষের ক্ষয়রোধে সহায়তা করে। এরা হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। যদিও এটি ততটা সমৃদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস নয়, তবুও সামান্য উপকার পাওয়া যেতে পারে।

৩. অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে
"দ্য মাদার" নামে পরিচিত এক ধরনের ঝাপসা উপাদান কাঁচা ভিনেগারে থাকে, যাতে প্রোবায়োটিক থাকে। এগুলো হজম, রোগ প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

তবে যেহেতু আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়, তাই এটি সবচেয়ে ভালো ফারমেন্টেড খাবার নয়। দই, কেফির, সয়ার মিসো, কিমচি বা আচার এদিক থেকে অনেক বেশি কার্যকর।

৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে
কার্বোহাইড্রেট খেলে তা গ্লুকোজে পরিণত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে। ইনসুলিন এই চিনি কোষে পাঠায়। যাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া ধীর হয়। কিছু ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার হজমের গতি কমিয়ে রক্তে চিনি দ্রুত প্রবেশ রোধ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়, যদিও এই দাবি এখনো প্রমাণিত নয়।

৫. পেট ভরা থাকার অনুভূতি দিতে পারে
অ্যাসিটিক অ্যাসিড হজমের গতি কমাতে পারে, ফলে আপনি দীর্ঘক্ষণ পেটভরা অনুভব করতে পারেন। এছাড়া এটি এমন কিছু হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করতে পারে, যা ক্ষুধা কমাতে সহায়ক। তবে এর জন্য আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন।

কীভাবে নিরাপদে খাওয়া যায়
উচ্চ মাত্রায় অ্যাসিডিক হওয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি খেলে গলা, দাঁতের এনামেল বা পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই এটি সবসময় পানির সঙ্গে মিশিয়ে বা রেসিপিতে ব্যবহার করাই ভালো। নিচে কিছু নিরাপদ ও মজাদার ব্যবহারের উপায় দেওয়া হলো:

পানিতে মিশিয়ে: ১–২ চামচ ভিনেগার ৮–১০ আউন্স পানিতে মিশিয়ে পান করুন। চা, সেল্টজার, লেমনেড বা আপেল সিডারের সঙ্গেও মেশানো যায়।

ফায়ার-সিডার টনিক: মধু, মসলা, হার্ব ও সবজি দিয়ে ভিনেগার ইনফিউজ করে একটি স্বাস্থ্যকর টনিক তৈরি করুন।

সালাদ ড্রেসিং: সহজ ভিনেগারেট তৈরি করে সালাদে বা রোস্ট করা সবজিতে ব্যবহার করুন।

স্মুদি: স্মুদিতে একটু ভিনেগার যোগ করলে টক-মিষ্টি স্বাদে ভিন্নতা আসে। কলা, বেরি, খেজুর বা মধুর সঙ্গে ভালো মানিয়ে যায়।

ম্যারিনেডে: মাংস নরম করতে বা অন্য এসিডিক উপাদানের বদলে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।


আপেল সিডার ভিনেগার কিছু ছোটখাটো স্বাস্থ্য উপকার দিতে পারে, তবে এটি কোনো অলৌকিক উপাদান নয়। এটি স্বাস্থ্যের উন্নতির সহায়ক হতে পারে, তবে চিকিৎসা নয়। প্রোবায়োটিকের জন্য আরও কার্যকর বিকল্প রয়েছে যেমন—দই, কিমচি ইত্যাদি। আর নতুন কিছু খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
 

মারিয়া

×