ছবি: সংগৃহীত
মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ও মার্কেটার শীক্ষা রায় এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার আয় বাড়ার সাথে সাথে খরচের অভ্যাসও পরিবর্তন হচ্ছে। এতে সঞ্চয় করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ঠিকই, কিন্তু একইসঙ্গে সন্তুষ্টিও পাই—কারণ আমি এখন ভালো জীবনযাপন করতে পারছি। তবে প্রতিনিয়তই আমাকে বাড়িভাড়া, জীবনযাত্রার খরচ আর ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে, বিশেষ করে মুম্বাইয়ের ক্রমবর্ধমান খরচের কারণে। একদিকে আমি খরচের স্বাধীনতা উপভোগ করি, অন্যদিকে খেয়াল রাখতে হয় যেন খরচ অতিরিক্ত না বেড়ে যায়।”
একই অভিজ্ঞতা দিল্লির আইনজীবী ভাব্যা রায়েরও। তিনি বলেন, “প্রতিবার ইনক্রিমেন্টের পর আমার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। এক সময় যেখানে ২ বেডরুমের ছোট ফ্ল্যাটে থাকতাম, এখন আমি বড় অ্যাপার্টমেন্টে চলে এসেছি। বিলাসী জীবন বেছে নিলে বাস্তববোধ অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে। আয়ের সাথে কেনার ক্ষমতা বাড়ে, আর সেইসঙ্গে খরচ করাও একধরনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। বুঝতে পারি, খরচে লাগাম টানা দরকার—কিন্তু বলা যত সহজ, বাস্তবে তা কঠিন। আয় বাড়লে প্রয়োজন আর চাহিদার মাঝে পার্থক্যটাও অস্পষ্ট হয়ে যায়।”
লাইফস্টাইল ক্রিপ কী?
লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন নামেও পরিচিত এই প্রবণতা হল—আয়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে ব্যয় বাড়িয়ে ফেলা। মানুষ শুরুতে আয়ের অনুপাতে খরচ সামলে চললেও, ক্যারিয়ারে উন্নতি ও আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা লক্ষ্য করে যে সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ছে না। কারণ, সচেতন বা অচেতনভাবে তারা যত আয় করে, তার বেশিরভাগই খরচ করে ফেলতে থাকে।
কেন ঘটে লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন?
-
বাজারজাতকরণ কৌশল ও ক্রেডিট সুবিধা—যেমন 'এখন কিনুন, পরে পরিশোধ করুন', ক্রেডিট কার্ড বা কিস্তি সুবিধা—ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।
-
বিলাসিতা ও নিজের ভালো থাকার জন্য আজকের মানুষ অন্য খরচে ছাড় দিয়ে হলেও বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে রাজি।
-
জেনারেশন জেড এবং মিলেনিয়ালরা সোশ্যাল মিডিয়ার সাজানো কনটেন্টে প্রভাবিত হয়, যেখানে সৌন্দর্য, ফিটনেস ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়।
-
নিজের জীবনযাপন অন্যের সঙ্গে তুলনা করা এবং তাদের বিলাসী জীবনের অংশ হতে না পারার ভয় থেকেও ব্যয় বাড়ে।
কীভাবে এড়িয়ে চলবেন লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন?
-
একটি নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করুন এবং বাসাভাড়া, বাজার খরচ, যাতায়াতের মতো প্রয়োজনীয় ব্যয়কে প্রাধান্য দিন।
-
তাৎক্ষণিক আনন্দের জন্য খরচ করা এড়িয়ে চলুন, দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিন।
-
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য আলাদা ফান্ড তৈরি করুন, যেগুলো সহজে খরচ করা যাবে না। এতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে।
-
প্রতিদিনের খরচ নজরে রাখুন, যেন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সনাক্ত করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আবির
