ছবি: সংগৃহীত।
বদহজম, অম্লতা বা পেট ফাঁপার সমস্যায় যদি আপনি প্রায়ই ভোগেন, তবে সমাধান লুকিয়ে থাকতে পারে আপনারই রান্নাঘরের কাবিনেটে। জিরা, ধনে ও মৌরির সমন্বয়ে তৈরি ‘সিসিএফ টি’ (CCF Tea) হল একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পানীয়, যা হজমশক্তি উন্নত করার পাশাপাশি দেহকে ডিটক্সিফাই করতেও সহায়তা করে।
এই চা-টি শুধু আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের নয়, বলিউড তারকাদেরও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। অভিনেত্রী শিল্পা শেঠি নিজেই নিয়মিত এই চা পান করেন বলে জানিয়েছেন, যা তার হজম ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে।
যেসব উপকার মেলে সিসিএফ চা থেকে।
আয়ুর্বেদ মতে, দেহের তিনটি দোষ—ভাত, পিত্ত ও কফ—সমতায় থাকলেই শরীর থাকে সুস্থ। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডিম্পল জাঙ্গদা জানান, “সিসিএফ টি দেহের ‘অগ্নি’ বা হজম আগুনকে জাগিয়ে তোলে। এতে দেহের টক্সিন সহজে বের হয়ে যায় এবং পুষ্টি শোষণ বাড়ে।”
এই চা হজম এনজাইম সক্রিয় করে এবং খাবার ভাঙতে সহায়তা করে। এতে পেট হালকা লাগে ও খাবার পরে অস্বস্তি হয় না।
জিরা, ধনে ও মৌরির সংমিশ্রণ হজমতন্ত্রকে শান্ত করে এবং গ্যাস নির্গমনে সাহায্য করে। ফলে ফাঁপা ভাব ও অস্বস্তি কমে।
এই চা লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং দেহ থেকে বর্জ্য দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনি তরতাজা অনুভব করেন।
সিসিএফ টি বিপাকক্রিয়া সক্রিয় করে, যা ক্যালোরি পোড়াতে ও সারা দিন শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
হজম ও বিপাকক্রিয়া উন্নত হলে প্রাকৃতিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। এটি প্রদাহ ও অম্লতা কমিয়ে শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নারীদের মাসিকের সময় যে অস্বস্তি হয়, তা কমাতে পারে এই চা। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পিরিয়ডের ব্যথা ও পিএমএস-এর উপসর্গ কমায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত ৮ সপ্তাহ প্রতিদিন নিয়ম করে এই চা পান করলে উপকার মেলে। খাবারের পর বা সকালে খালি পেটে পান করা যায়। সন্ধ্যায় হালকা পানীয় হিসেবেও উপযোগী। মূল বিষয় হল নিয়মিত পান করা।
যদিও সিসিএফ টি বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ, তবে কারও কারও সামান্য অস্বস্তি হতে পারে। যাদের জিরা, ধনে বা মৌরিতে অ্যালার্জি আছে, তারা এড়িয়ে চলবেন। গর্ভবতী নারীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ মৌরি জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে। রক্তচাপ বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেলে পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
যেভাবে বানাবেন সিসিএফ টি:
১. ছোট একটি সসপ্যানে ২ কাপ পরিশ্রুত পানি জ্বাল দিন।
২. এর মধ্যে ½ চা চামচ করে জিরা, ধনে ও মৌরি যোগ করুন।
৩. হালকা নাড়াচাড়া করে ৫ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন।
৪. আঁচ বন্ধ করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন।
৫. চাইলে এক চামচ মধু বা কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করুন।
৬. হালকা গরম অবস্থায় পান করুন।
খালি পেটে পান করলে সেরা উপকার মেলে, তবে খাবারের পরেও এটি পেট হালকা রাখতে কার্যকর। আয়ুর্বেদিক এই পানীয়কে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করলেই মিলবে সুস্থতা ও আরাম।
মিরাজ খান
