
ছবি: সংগৃহীত।
বাচ্চাদের এক মুহূর্তের অসতর্কতাই বড় বিপদের কারণ হতে পারে। খেলতে খেলতে, খাবার খেতে খেতে কিংবা ছোট কোনো বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অনেক সময় বাচ্চারা সেটা মুখে দিয়ে ফেলে—আর সেটাই গলায় বা শ্বাসনালিতে আটকে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে। এমন সময় ঘাবড়ে না গিয়ে দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াই পারে শিশুর জীবন বাঁচাতে।
শিশুরা কৌতুহলী। তাদের চারপাশের সবকিছুই তারা মুখে দিয়ে চিনে নিতে চায়। ফলে ছোট বস্তু যেমন মুদ্রা, বোতামের ঢাকনা, মার্বেল, খেলনার ছোট অংশ কিংবা খাবারের টুকরো শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে শ্বাসকষ্ট (অ্যাসফিক্সিয়া) পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, চলুন জেনে নেওয়া যাক:
১. লক্ষণগুলো চিনে নিন:
- হঠাৎ করে কথা বলা বা কান্না বন্ধ হয়ে যাওয়া
- মুখ বা ঠোঁট নীলচে হয়ে যাওয়া
- জোরে জোরে কাশতে থাকা বা হাঁচি
- প্রচণ্ড দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভাব
- ঘাম এবং আতঙ্কিত চেহারা
২. তাৎক্ষণিক করণীয় (১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর জন্য):
- শিশুকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে নিজের হাঁটুর ওপর রাখুন।
- এরপর হাতে হালকা চাপ দিয়ে পিঠে ৫টি থাপ দিন (back blows)।
- এরপর অন্য হাতে শিশুকে সামনের দিকে ধরে তার বুকের মাঝখানে দুই আঙুল দিয়ে ৫ বার চেপে দিন (chest thrust)।
- প্রয়োজনে এই পদ্ধতিগুলো বিকল্পভাবে প্রয়োগ করুন যতক্ষণ না বস্তুটি বের হয়ে আসে বা বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে।
৩. বড় বাচ্চার (৫ বছরের ঊর্ধ্বে) ক্ষেত্রে Heimlich maneuver প্রয়োগ:
- বাচ্চাকে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরুন।
- নাভির ঠিক ওপরের অংশে মুঠো করে চাপ দিন উপরের দিকে।
- একটানা কয়েকবার করুন যতক্ষণ না অবরুদ্ধ বস্তুটি বের হয়ে আসে।
৪. কখন হাসপাতালে যাবেন:
- যদি বাচ্চা অচেতন হয়ে যায়
- যদি বস্তুর কারণে বাচ্চার রঙ বিবর্ণ হতে থাকে
- যদি আপনি ঘরে করণীয় সব কিছু করেও ব্যর্থ হন
৫. প্রতিরোধে যা করবেন:
- ছোট খেলনা, মুদ্রা বা খাবারের টুকরো শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন
- খাবার ছোট ছোট টুকরো করে দিন এবং খাওয়ার সময় সারাক্ষণ নজরে রাখুন
- শিশুদের হাঁটতে হাঁটতে বা খেলতে খেলতে খাবার খেতে দিবেন না
বাচ্চার শ্বাসনালীতে কিছু আটকে যাওয়ার ঘটনা খুবই ভয়াবহ ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজনীয়। তবে মা-বাবা বা আশপাশের মানুষ যদি প্রাথমিক করণীয়গুলো জানেন, তাহলে অনেক সময় বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই সচেতন থাকুন, শিশুদের নিরাপদে রাখুন।
প্রয়োজনে শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
নুসরাত