ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

নীরব ঘাতক ‘ফ্যাটি লিভার’—রাতেই দেখা দেয় উপসর্গ!

প্রকাশিত: ১৪:০২, ১৫ জুন ২০২৫

নীরব ঘাতক ‘ফ্যাটি লিভার’—রাতেই দেখা দেয় উপসর্গ!

ছবিঃ সংগৃহীত

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ—বিশেষ করে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)—একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০.২% মানুষের শরীরে দেখা যায়। আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর হার ৪০% ছাড়িয়ে গেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই রোগের বহু উপসর্গ রাতের বেলায় আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) এমন একটি অবস্থা যেখানে অ্যালকোহল গ্রহণ না করেও যকৃতের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে থাকে। এটি সাধারণত স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই রোগের পরিধি সাধারণ ফ্যাট জমে যাওয়া (NAFL) থেকে শুরু করে সিরাসিস পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

রাতে দেখা দিতে পারে যেসব লক্ষণ:

১. অতিরিক্ত রাতে ঘাম হওয়া
রাতে ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর ঘাম হওয়া NAFLD-এর অন্যতম উপসর্গ। এমনকি শীতল ঘরেও ঘাম দিয়ে ভিজে ওঠা সম্ভব হয়, কারণ লিভারের দুর্বলতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়।

২. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
রাতের বেলায় অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণ ক্লান্তি নয়—একপ্রকার অপ্রতিরোধ্য অবসাদ যা দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে।

৩. ঘুমের ব্যাঘাত ও অনিদ্রা
লিভারের প্রদাহ, বিষাক্ত পদার্থ ঠিকমতো প্রসেস না হওয়া এবং রক্তে শর্করার তারতম্য ঘুমকে ব্যাহত করে। ফলে ঘুমাতে সমস্যা বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়।

৪. রাতে পেটে অস্বস্তি
ডান দিকের ওপরের পেটে চেপে বসা বা পূর্ণতা অনুভব হওয়া, যা রাতে আরও বাড়ে। এই অস্বস্তি অনেক সময় ঘুম ব্যাহত করে।

৫. রাতে ক্ষুধা কমে যাওয়া
রাতের খাবারের সময় ক্ষুধা না পাওয়া, বিশেষত প্রতিদিনের তুলনায় কম খাওয়া বা একেবারেই না খাওয়া—NAFLD-এর অন্যতম লক্ষণ।

৬. মস্তিষ্ক ঝাপসা হওয়া ও মানসিক অবসাদ
রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেললে মনে রাখতে সমস্যা, মনোযোগে ঘাটতি, বা ‘ব্রেইন ফগ’ দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো সাধারণত রাতে বেশি দেখা দেয়।

৭. পা ও পায়ের পাতায় ফোলা
লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে তরল জমে যায়, যা পা ও পায়ের পাতায় ফোলার সৃষ্টি করে। এটি বিশেষ করে রাতে স্পষ্ট হয় এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।

৮. চামড়ায় চুলকানি
যকৃতের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পিত্তরস চামড়ার নিচে জমে গিয়ে চুলকানি সৃষ্টি করে। অনেক সময় কোনো র‍্যাশ না থাকলেও চুলকানি হতে পারে।

৯. অকারণে ওজন কমে যাওয়া
হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাসও NAFLD-এর সম্ভাব্য লক্ষণ। লিভার শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এর সমস্যায় ওজন কমে যেতে পারে।

১০. চামড়া ও চোখের সাদা অংশে হলদেটে ভাব (জন্ডিস)
NAFLD-এর পরবর্তী ও মারাত্মক ধাপে জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা সংকেত দেয় এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

কী করণীয়?
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ—যেমন সুষম আহার, নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলা এবং পর্যাপ্ত ঘুম লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলোর কোনোটিও রাতের বেলা নিয়মিত দেখা দেয়, অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রক্ত পরীক্ষা ও চিত্রায়নের (ইমেজিং) মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য সচেতন হোন, লিভারকে ভালোবাসুন। রাতের উপসর্গ মানেই হালকা নয়—হতে পারে গুরুতর সংকেত।

নোভা

×