
ছবি: সংগৃহীত।
ক্যান্সার—একটি শব্দ, যেটি শুনলেই শরীর ও মন কেঁপে ওঠে। কিন্তু ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অনেক ধরনের ক্যান্সার এখন আর প্রাণঘাতী নয়, যদি সময়মতো ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীর আগেভাগেই কিছু সতর্ক সংকেত দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকেই এই সংকেতগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করেন, যার মাশুল হয় ভয়ংকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তখনই তা নিরাময়ের সবচেয়ে বড় সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হলো—অনেকেই শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তনগুলোকে সাধারণ অসুস্থতা ভেবে এড়িয়ে যান।
নিচে এমন কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ একসঙ্গে বা দীর্ঘদিন থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি—
১. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি:
কাজ না করলেও হঠাৎ করে অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করলে তা ক্যান্সারের আগাম লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে রক্ত ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে।
২. হঠাৎ ওজন হ্রাস:
যদি কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যেতে থাকে, তবে সেটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটি পাকস্থলীর, অগ্ন্যাশয়ের বা ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৩. দীর্ঘমেয়াদি কাশি বা কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া:
সর্দি-কাশি হলেও সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি কাশি দীর্ঘদিন থাকে কিংবা কণ্ঠস্বর ক্রমাগত ভাঙতে থাকে, তবে তা গলার বা ফুসফুসের ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে।
৪. চামড়ায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন:
মাছিলার আকৃতি, রঙ বা সাইজ হঠাৎ বদলে যাওয়া বা চামড়ার কোথাও হঠাৎ দানা বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া মেলানোমা (চর্ম ক্যান্সার) ইঙ্গিত দিতে পারে।
৫. ঘন ঘন জ্বর বা ইনফেকশন:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু এর পেছনে যদি রক্ত ক্যান্সার বা অন্যান্য ক্যান্সারের ভূমিকা থাকে, তবে সময় নষ্ট না করে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।
৬. মল-মূত্রের অভ্যাসে পরিবর্তন:
দীর্ঘ সময় ধরে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা রক্ত দেখা—এসব উপসর্গ কোলন ক্যান্সার বা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
৭. বুকের বা শরীরের যেকোনো অংশে গিঁট বা ফোলা ভাব:
বিশেষ করে স্তন, ঘাড়, বগল বা কুঁচকিতে কোনো গিঁট দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি স্তন ক্যান্সার বা লিম্ফোমার ইঙ্গিত হতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সচেতনতা। শরীরের প্রতি যত্নবান হোন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে কখনোই অবহেলা করবেন না। মনে রাখবেন, আগেভাগে ধরা পড়লে ক্যান্সার এখন আর নিশ্চিত মৃত্যু নয়—বরং এটি একটি লড়াই, যেটি জেতা সম্ভব।
নুসরাত