ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

রূপগঞ্জে হাবিবনগর-পূর্বাচল সেতু অসমাপ্ত, জনভোগান্তি চরমে

মো. শরীফ ভুইয়া, সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ॥

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ১৫ জুন ২০২৫

রূপগঞ্জে হাবিবনগর-পূর্বাচল সেতু অসমাপ্ত, জনভোগান্তি চরমে

নারায়ণগঞ্জের হাবিবনগর-পুর্বাচল সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিনেও শেষ হয়নি। দুই বছর আগেই এ সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা সম্পূর্ণ হয়নি। নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে একটি মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করা হোক।

এই একটি সেতুর জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রূপগঞ্জ, পূর্বাচল, হাবিবনগর, পিতলগঞ্জ, জাঙ্গীর, সুরিয়াব, হারিন্দা, মশুরি, মধুখালী, ঋষিপাড়া, শিমুলিয়া, বিংরাবসহ ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কে যাতায়াতকারী সবাইকে। শতাধিক গ্রামের মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কে রয়েছে তিনটি সংযোগ সেতু, যেগুলোর কাজ ধীরগতিতে চলছে। সেতুর দুই পাশে কোথাও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড নেই। মাটির রাস্তা দিয়ে চলছে রিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও বাস। উঁচু-নিচু রাস্তা ও ধুলাবালিতে সৃষ্টি হচ্ছে ভোগান্তি। বর্ষাকালে প্রায়ই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্লিপ করে যানবাহন উল্টে গিয়ে ঘটছে অঙ্গহানির মতো দুর্ঘটনা।

হাবিবনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, “এই সেতুর কারণে ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের পাশে যতগুলো বাজার আছে সব বন্ধ হওয়ার পথে। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।”

পূর্বাচল মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতালের এমডি আমিরুল ইসলাম ইমন বলেন, “মানুষের সেবার জন্য আমরা কয়েকজন মিলে একটি হাসপাতাল গড়েছি। কিন্তু এই সংযোগ সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা ঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে পারছি না।”

ডা. ইদ্রিস আলী মিল্টন জানান, “এই সড়ক ব্যবহার করেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে শত গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।”

বিএনপি নেতা জিন্নত আলী বলেন, “শত শত গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঢাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাদের সবাইকেই এই সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু তিনটি সংযোগ সেতুর নির্মাণ খুবই ধীরগতিতে চলছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।”

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু মোহাম্মদ মাছুম বলেন, “আমি রূপগঞ্জ গ্রামের ছেলে, প্রতিদিন এই রাস্তা ব্যবহার করি। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুজল হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং থানায় সেবা নিতে আসা মানুষদের সবাইকেই কষ্ট করতে হয়। পুলিশ প্রশাসনেরও ভোগান্তি হয়।”

অটো রিকশাচালক আবু সিদ্দিক বলেন, “রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক সময় গাড়ি উল্টে যায়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় এই পথেই চলাচল করতে হয়। আয়ও অনেক কমে গেছে। সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত সেতুর নির্মাণ শেষ হোক।”

কৃষক শুকুর আলী বলেন, “আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি পূর্বাচলে নিতে পারি না ঠিকভাবে। সেতুর কাজে অবহেলার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।”

মিষ্টির দোকানি আবুল হোসেন বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখার মতো কেউ নেই। অথচ এই সেতু আমাদের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

শিক্ষার্থী রাসেল ভুইয়া বলেন, “বৃষ্টির সময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় প্রায়ই। এতে আমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।”

এলজিইডির রূপগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না পাওয়ায়, মুঠোফোনে জানা যায়—২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে ৮৫ কোটি টাকায় সড়ক ও সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই)। ২০২৩ সালের ২২ মে কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ২৮ মে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের অনেকেই পালিয়ে যায়। এখন ধীরগতিতে কাজ চলছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি বা ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ আক্তার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “এটি একটি প্যাকেজ প্রকল্প—রাস্তা ও সেতু একসঙ্গে। কাজ চলমান আছে, তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। কিছু সময় বাড়াতে হবে।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি এখানে যোগদানের পর থেকেই এনডিই ও আমাদের প্রকৌশল বিভাগকে নিয়ে এই রাস্তার বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছি। মূলত এটি জেলার প্রকল্প। ৫ আগস্টের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, কাজ শেষ হতে আরও ২-৩ মাস সময় লাগবে।”

সজিব

×