ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক

শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৭ আগস্ট ২০২৪

শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যে পদত্যাগের দাবি করেছেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সদ্য পদত্যাগী সরকার। ফলে নতুন কোনো সরকারকেই তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ ছাড়া কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পেশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্থিরতা শুরু হয়। কর্মচারীদের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগপত্র দেন।

এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, তাঁরা পদত্যাগপত্র কার কাছে দিয়েছেন-তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার; পদত্যাগপত্র দিতে হলে সরকারের কাছেই দিতে হবে। অন্য কারও কাছে তাঁরা পদত্যাগপত্র দিতে পারেন না। গভর্নরের প্রসঙ্গে মেজবাউল হক বলেন, গভর্নর ছুটিতে আছেন; এখন ডেপুটি গভর্নররা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা বুধবার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছেন, যেমন পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন, পে স্কেল, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ ইত্যাদি। এসব অসন্তোষের কারণে কর্মচারীরা শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বলে উল্লেখ করেন মেজবাউল হক।
গভর্নরের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি গভর্নররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে গভর্নরের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু কর্মচারীরা ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগ দাবি করায় তাঁরা সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতে আরও সময় লাগলে কী হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই ধরনের কাজ হয়; প্রথমত, দৈনন্দিন কার্যক্রম; দ্বিতীয়ত, নীতিগত।

দৈনন্দিন কার্যক্রম বিভাগীয় প্রধানরাই চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সরকার না থাকলে বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় না। এখন মূলত দৈনন্দিন কার্যক্রমই চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সাতটি ব্যাংকের বিষয়ে জানতে চান। বলেন, এই সাতটি ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি আছে। বিশ্বের কোথাও কোনো ব্যাংক চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ে চলতে পারে-এমন নজির নেই বলেই দেখা যায়। আপনারাই এসব করেছেন; এই বাস্তবতায় আপনাদের দিয়ে স্বায়ত্তশাসন সম্ভব কি না।

জবাবে মেজবাউল হক বলেন, এসব কিছু এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর। তারা যে নির্দেশনা দেবে, তার ওপর। আইনি সংস্কারের কথা আমরা বলেছি; বুধবার যারা পদত্যাগের দাবি করেছেন তাঁদের আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার সকালে বিক্ষুব্ধ একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ভবনে অবস্থিত গভর্নরের ফ্লোরে ঢুকে পড়েন এবং দুজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চার ডেপুটি গভর্নর এবং আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে ‘পদত্যাগ’ করেছেন এবং যাঁরা কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁদের নিরাপত্তা দেন। তবে ঘটনার সময় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যালয়ে ছিলেন না।

দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁদের দাবি, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব শীর্ষ কর্মকর্তা দায়ী এবং তাঁরা দায়িত্বে থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কক্ষে ঢুকে পড়েন এবং তাঁকে পদত্যাগে চাপ দেন। এ সময় কাজী ছাইদুর রহমান একটি সাদা কাগজে পদত্যাগের কথা লেখেন এবং স্বাক্ষর করেন। এর পর তিনি ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরপর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে যান।

ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার জানান, তিনি কার্যালয় ত্যাগ করছেন। বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে কর্মচারীরা তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, তাঁরা অফিসে আর আসবেন না। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাসও জানান, তাঁরা আর ব্যাংকে আসবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এসব কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাহী পরিচালক ১ জাকির হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করেন।

×