ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানিতে মাইলফলক

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৩ জুলাই ২০২২

রফতানিতে মাইলফলক

চট্টগ্রাম বন্দর

প্রবাসী আয়ে রেমিট্যান্স কমলেও রফতানি আয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে শেষ হলো ২০২১-২২ অর্থবছর। সদ্য সমাপ্ত এই অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ (৫২.০৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ এই অঙ্ক আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে পণ্য রফতানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি

একই সঙ্গে একক মাসের হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও পণ্য রফতানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ এই মাসে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার (. ৯১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন রফতানিকারকরা যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি আর নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ। 

এই মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার গত বছরের জুন মাসে ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হয়েছিল

 রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও জুন মাসে রফতানিতে এই উল্লম্ফন অর্থনীতিবিদ রফতানিকারকদের অবাক করে দিয়েছে এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তারা

একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (.৯০ বিলিয়ন) ডলার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি লাখ ৭০ হাজার (.৮৫ বিলিয়ন) ডলার মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (.২৯ বিলিয়ন) ডলার

 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রবিবার রফতানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার (৫২.০৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের রফতানিরকরা লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ

হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশবাংলাদেশে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে রফতানি খাতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি লক্ষ্যের চেয়ে এত বেশি আয়ও কখনও দেশে আসেনি। 

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প-মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ  বলেন, ‘মে মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমায় দেশের অর্থনীতিবিদ-রফতানিকারকদের মধ্যে অনেকেই হতাশ হয়েছিলেনতারা বলতে শুরু করেছিলেন, এই তো রফতানি কমা শুরু হলো

কিন্তু আমি ওই সময় বলেছিলাম ভিন্ন কথা আমি বলেছিলাম মে মাসে রোজার ঈদের কারণে /১০ দিন সব পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল; চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ ছিল সেই কয়দিন আসলে কোনো রফতানি হয়নি সে কারণেই মে মাসে রফতানি কম হয়েছিল জুন মাসে ঠিকই আবার বেড়েছে শুধু বাড়েনি এক মাসের হিসাবে রেকর্ড হয়েছে

দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক ৎপাদন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ কথা ঠিক যে, যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে

সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় কম দামি পোশাক তাদের কিনতেই হবে আমরা প্রচুর কম দামি পোশাক রফতানি করি সে কারণে আমার মনে হয় না যে যুদ্ধের কারণে আমাদের রফতানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে’ 

 

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকান ক্রেতারা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন ভিয়েতনাম থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে তাই আগামী দিনগুলোতে আমাদের রফতানি বাড়বে বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে

গত মে মাসে পণ্য রফতানি করে ৩৮৩ কোটি (.৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল যা ছিল আগের মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছিল দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি আগের মাসগুলোতে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল

৮২ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ

হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই বছরে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৯ শতাংশ

ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ

 

অন্যান্য খাত

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, শুধুমাত্র পাট ছাড়া অন্য সব খাতেই বিদায়ী অর্থবছরে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এই বছরে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারের চামড়া চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে

হিমায়িত মাছ রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার ওষুধ রফতানি থেকে এসেছে প্রায় ১৯ কোটি ডলার

 

এছাড়া স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি থেকে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, বাইসাইকেল ১৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ১৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রফতানি থেকে কোটি ২৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ

তবে পাট পাটজাত পণ্য থেকে রফতানি আয় কমেছে ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৯১ শতাংশ কম লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ

গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রফতানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার

২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম

×