ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

রাজশাহীর গাছে গাছে অযত্নে বাড়ছে আম

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৩ মে ২০২০

রাজশাহীর গাছে গাছে অযত্নে বাড়ছে আম

ফলন নিয়ে শঙ্কা, করোনার প্রভাবে বাণিজ্য নিয়ে হতাশ চাষী ও ব্যবসায়ীরা মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সুমিষ্ট আমের জন্য দেশজুড়ে খ্যাতি রাজশাহীর আমের। এ অঞ্চলের গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে থোকায় ঝোলা আম। তবে করোনা সঙ্কটে এবার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে আমের বাণিজ্য। করোনার কারণে আমের বাণিজ্য যে ভাল হবে না তা মনে করেই চরম হতাশ এখন এ অঞ্চলের আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এখনই চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সাধারণ গুটি জাতের (গোপালভোগ) আম বাজারে আসে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতির মুখে শেষ পর্যন্ত গাছ থেকে আম নামানো যাবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা ভর করেছে রাজশাহীর চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এমনিতেই এবার আমের মুকুলে পরিচর্যা করতে পারেননি চাষীরা। এ নিয়ে ফলন নিয়েও দুরাশা বিরাজ করছে তাদের মনে। রাজশাহীর আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের মৌসুমে শুধু আমকেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়ে থাকে হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে চাঙ্গা হয় রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি। মৌসুমের এই সময় থেকে শুরু হয় আমের বাগান কেনাবেচা। তা বদল হতে থাকে কয়েক হাতে। তবে এবার মৌসুমের শুরু থেকে করোনাভাইরাসের কারণে আমের বাগান কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। বাগান মালিকরা সেভাবে পরিচর্যা করতে পারেননি। ক্ষতির আশঙ্কায় মালিকরা গাছের পরিচর্যা করতে পারেননি। মূলত এই সময়ে আম ঘিরে চাঙ্গা থাকে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। তবে এসব মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমনিতেই এ বছর গাছে আমের মুকুলের পরিমাণ তুলনামূলক কম এসেছিল। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গুটিও কম ধরেছে। তবে যেসব গাছে গুটি এসেছে সেগুলো এখন বড় হচ্ছে অযতœ-অবহেলায়। কৃষিবিদরা বলছেন, এবার মুকুলিত হওয়ার পর বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমের মুকুল ঝরে গেছে। এতে ফলন কিছুটা কম হবে। রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনের উপজেলা চারঘাট, বাঘা, পবা ও পঠিয়া এলাকায় এবার তুলনামূলক আমের উৎপাদন কম হবে। আমচাষীরা বলছেন, এবার মুকুলের পরিমাণ কম ছিল। তার ওপর বৃষ্টি ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছে শুরুতেই। এর মধ্যেও যারা গাছের পরিচর্যা করতে পেরেছেন তাদের গাছে ফলন কিছুটা ভাল হবে। গত কয়েক বছর ধরে এমনিতেই দাম না পেয়ে অনেক আমচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তো করোনার কারণে অনেকে পরিচর্যায় করতে পারেননি। তাই এবার রাজশাহী অঞ্চলে আমের ফলন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কম হতে পারে। জেলার চারঘাট ও বাঘার আমচাষীরা জানান, মৌসুমের এই সময়ে শুরু হয়ে যায় বাগান কেনাবেচা। লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকার। কিন্তু এখন সব বন্ধ রয়েছে করোনা সঙ্কটের মুখে। তাছাড়া গাছে যে আম আছে তার ফলন হলেও মৌসুমে দাম মিলবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় বাগান মালিকরা। এরই মধ্যে অনেক বাগান মালিক পরিচর্যায় অর্থলগ্নি বাদ দিয়ে ভাগ্যের ওপর ভর করে বসে আছেন। জেলার চারঘাট-বাঘার আমচাষীরা বলছেন, দুই উপজেলায় এবার আমের অবস্থা তেমন ভাল নয়। সময়মতো পরিচর্যা করা যায়নি। এ কারণে তারা মনে করছেন আমের ফলন এবার অনক কমে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই সার্বিক অর্থনীতি দুরবস্থার মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারাতে বসেছে। এ অবস্থায় আমের দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় চাষী ও ব্যবসায়ীরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন। তবে আমের ফলন নিয়ে মোটেও হতাশ নয়, স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন এবার আমের মুকুল এসেছে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ গাছে। এখন সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা করতে পারলে ফলন ভাল হবে। তবে করোনা পরিস্থিতি মে মাস পর্যন্ত গড়ালে বাজারজাত নিয়ে সমস্যা দেখা দিবে। এ অবস্থায় কাক্সিক্ষত দাম মিলবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরুতে মুকুলিত গাছ দেখে এ বছর আমের ফলন ভাল হবে বলে আমচাষীরা আনন্দিত ছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষীরা বলছেন, আমের বাজারে মন্দা দেখা দিবে। তাই তারা আম নিয়ে এখনই দিশেহারা অবস্থায় পড়েছেন। আমচাষীদের ভাষ্য, গত বছর আমে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার হয়েছিল বলে বাজারে আমের চাহিদা কমে গেছিল। এবারো বড় ক্রেতারা আর আগের মতো আমের বাগান কিনছেন না। জানা গেছে, আমের রাজ্য হিসেবে উত্তরের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশে প্রসিদ্ধ। এই দুই জেলায় আমের বাগান রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ দুই জেলা মিলে প্রায় ৫ লাখ টন আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এবারও সেই পরিমাণ আম উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বলেন, সব মিলিয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের অবস্থা ভাল আছে। এখনই চাষীরা যদি পরিচর্যা বাড়াতে পারে তাহলে ফলন নিয়ে কোন সংশয় থাকবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী হলে বাজারজাতে সমস্যায় পড়তে হবে। বিশেষ করে পরিবহন চলাচল শুরু হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা পাবে। পরিবহন সমস্যা কেটে গেলে এবং বাজারে আম বিক্রি করা গেলে কৃষকরা যে ক্ষতির শঙ্কা করছেন তা অনেকটায় কেটে যাবে।
×