ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গভর্নরের বৈঠক

সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ব্যাংক ঋণে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন

ব্যাংক ঋণে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।  সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে। বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনাকালীন ও সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব পলিসি নেওয়া হয়েছে এ জন্য গভর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

আগামীতে যেন সুদের হার না বাড়ে আমরা গভর্নরকে সে অনুরোধ জানিয়েছি। তবে গভর্নর জানিয়েছেন সুদহার তেমন বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ঋণ পরিশোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিল্পখাতকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধে। আরও কিছু খাতকে এ সুবিধা দেওয়া যায় কি না সে বিষয়ে জানিয়েছি। যাতে ব্যবসায়ীরা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারেন। ডলারের বিষয়ে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, নির্ধারিত দামে যেন ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারেন এজন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছে।

গভর্নর জানিয়েছেন এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এলসি খোলা নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা কথা বলেছি, তারা যেন এলসি খুলতে পারেন। গভর্নর এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যাংকগুলোকে সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতি বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনো ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়। কোনো নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে কামনা করেন। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ব্যবসায়ীবান্ধব গভর্নর উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে করোনা মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে আর্থিক ও নীতিসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পলিসি সহায়তার কারণে করোনা মহামারির ধকল সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত ধকল সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এসময় নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে ব্যাংকগুলোকে সম্প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এরই মধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্প খাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারেন সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরই মধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা। এ সময় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের প্রমুখ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

×