
ছবি: সংগৃহীত
ভাষা শুধু কথোপকথনের মাধ্যম নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক। যুগে যুগে বহু ভাষা হারিয়ে গেলেও, কিছু ভাষা যুগের পর যুগ ধরে টিকে রয়েছে। এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে আমরা অতীতের মানুষের চিন্তাভাবনা, সাহিত্য ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারি।
চলুন জেনে নিই এখনো টিকে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো পাঁচটি ভাষা সম্পর্কে।
১. তামিল
উৎপত্তি: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সাল
বর্তমান ব্যবহার: ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর
দ্রাবিড়ীয় ভাষাগুলোর মধ্যে তামিল সবচেয়ে পুরোনো ও জীবন্ত ক্লাসিক্যাল ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এর সাহিত্যিক ঐতিহ্য শুরু হয় ‘সঙ্গম সাহিত্য’-এর মাধ্যমে। তিরুক্কুরাল, থিরুবল্লুভার প্রমুখ কবি ও দার্শনিকদের রচনায় সমাজ, নৈতিকতা ও দর্শনের গভীর বিশ্লেষণ রয়েছে।
২. সংস্কৃত
উৎপত্তি: আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সাল
বর্তমান ব্যবহার: ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত
সংস্কৃতকে বলা হয় "দেবভাষা"। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থের মূল ভাষা এটি। বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ সহ বহু দার্শনিক ও ধর্মীয় পাঠ্য রচিত হয়েছে সংস্কৃতে। যদিও এখন দৈনন্দিন কথোপকথনে ব্যবহৃত হয় না, তবে ধর্মীয় ও একাডেমিক উদ্দেশ্যে এখনো চর্চা হয়।
৩. চীনা (চাইনিজ)
উৎপত্তি: খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ সাল (লিখিত ইতিহাস)
বর্তমান ব্যবহার: বিশ্বের ১০০ কোটির বেশি মানুষ
চীনা ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত লেখনীর মধ্যে একটি। ম্যানডারিন, ক্যান্টনিজ, হাক্কা ইত্যাদি উপভাষা থাকলেও সবকটির মূল শিকড় একই। এর চরিত্রভিত্তিক লিপি আজও চীনের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়ের প্রতীক।
৪. গ্রিক (গ্রীক)
উৎপত্তি: খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ সাল
বর্তমান ব্যবহার: গ্রীস ও সাইপ্রাসে, প্রায় ১.৩ কোটির বেশি মানুষ
গ্রিক ভাষা পশ্চিমা দর্শন ও বিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ দার্শনিকদের রচনায় ব্যবহৃত ভাষা এটি। প্রাচীন গ্রিক থেকে আধুনিক গ্রিকে রূপান্তর ঘটেছে সময়ের সঙ্গে, কিন্তু ভাষাটির মূল কাঠামো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
৫. হিব্রু
উৎপত্তি: আনুমানিক ৩০০০ বছর আগে
বর্তমান ব্যবহার: ইসরায়েলের রাষ্ট্রভাষা
হিব্রু ভাষা ছিল প্রাচীন ইসরায়েলীয়দের দৈনন্দিন ভাষা। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এই ভাষার ব্যবহার কমে গেলেও, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও গ্রন্থে এটি ব্যবহৃত হতো। ১৯ ও ২০ শতকে হিব্রু ভাষা পুনর্জীবিত হয়, যা মানব ইতিহাসে অন্যতম সফল ভাষা পুনরুজ্জীবন।
এই ভাষাগুলোর মধ্য দিয়ে শুধু অতীত নয়, বরং আজকের আধুনিক সমাজও ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ভাষা বাঁচলে, বাঁচে ইতিহাস; আর ইতিহাস বাঁচলে, বাঁচে সভ্যতার শিকড়।
মুমু