ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

 বেশিরভাগ নতুন বই চলে এসেছে, এখন সংগ্রহের সময়

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 বেশিরভাগ নতুন বই  চলে এসেছে, এখন  সংগ্রহের সময়

.

বলার অপেক্ষা রাখে না, মেলা এখন শেষ পর্যায়ে। আর মাত্র টা দিন। এর পরই বিদায় বলার পালা। মেলার প্রথম দিন থেকেই নতুন বই আসছিল। পর্যায়ে এসে সংখ্যাটা অনেক বেড়েছে। প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, বেশিরভাগ বই মেলায় চলে এসেছে। ফলে বই কিনতে চাইলে এখনই মূল সময়। প্রকৃত পাঠকরা বিষয়টি জানেন বৈকি। তাই অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিনে বাংলা একাডেমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে মনে হয়েছে, বিগত দিনের তুলনায় বই সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে। কোনো কোনো স্টল বা প্যাভিলিয়নে এত ভিড় ছিল যে, কাছে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। মাওলা ইউপিএল বা আগামীর মতো প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের ভিড় দেখে সত্যি ভালো লেগেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে অতো নাম ডাক নেই, চিরায়ত বই প্রকাশ করে থাকে সেগুলোতেও ভালো বিক্রি হয়েছে এদিন।

মাওলা ব্রাদার্সের কর্ণধার আহমেদ মাহমুদুল হক বলছিলেন, আমরা সৃজনশীল বই ছাড়া প্রকাশ করি না। এরপরও এখন বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ নতুন বই চলে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নতুন প্রকাশনার খোঁজ করেন তারা এখন মেলায় এলে হতাশ হবেন না।

এদিকে বাংলা একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, ২৪তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। নিয়ে মোট নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজার ৭৩৯টি। এর বাইরেও অনেক নতুন বই স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। ছাড়া চিরায়ত বইগুলো তো সব সময়ই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বইপ্রেমী যাারা তারা এখন বই কেনার জন্যই মেলায় যাচ্ছেন।

যে তুমি শব্দহীন শহীদ মিনার গ্রন্থের প্রকাশনা ।। খ্যাতিমান আবৃত্তি শিল্পী প্রয়াত হাসান আরিফকে কবিতায় প্রকাশ করেছেন আসাদুল ইসলাম। কবি এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে বহু বছর কাছ থেকে দেখেছেন। সেই দেখা থেকে লেখা। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান। শনিবার জার্নিম্যানের প্যাভিলিয়নে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কবি তারিক সুজাত, সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের কবি আসাদুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক সাদিকুর রহমান পরাগ।

মূল মঞ্চের আয়োজন ।। বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়স্মরণ : মোহাম্মদ রফিক এবং স্মরণ : খালেক বিন জয়েনউদদীনশীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিকের সূ² কবিতার মধ্যে স্মৃতির ভাগই বেশি। স্মৃতি আর কবির চারপাশের সত্তা তার কবিতায় মিলেমিশে আছে। তারুণ্যের প্রথম প্রহরে বামপন্থি রাজনৈতিক সক্রিয়তা আর কৈশোরে সংঘটিত দেশভাগ এবং দেশভাগের ফলে ভিটেমাটি তথা দেশ ছেড়ে মানুষের দেশান্তরী বা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনার মধ্যে যে বেদনাবোধ নিহিত, সেই বেদনাতুর স্মৃতিই তাকে কবিতা রচনায় প্রেরণা দিয়েছে। অন্যদিকে যে জন শিশুসাহিত্যিক প্রতিভার দীপ্ত আলোয় আমাদের শিশুসাহিত্যকে উদ্ভাসিত করেছেন, খালেক বিন জয়েনউদদীন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মূলত শিশুসাহিত্যিক হলেও তিনি জীবনী-প্রবন্ধ-নিবন্ধ ইত্যাদি রচনার ক্ষেত্রেও রেখেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। লোকসাহিত্যের ঐতিহ্যকে ধারণ করে খালেক বিন জয়েনউদদীন গড়ে তুলেছেন ছড়ার আধুনিক অবয়ব।

আলোচকরা বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিকের কাব্যভাষায় নিজস্ব স্বর লক্ষ করা যায়, যা তাঁকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছিল। বিশ্বসাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক মোহাম্মদ রফিক তাঁর কবিতায় বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন, পুরাণ-ইতিহাস, জীবন জীবনবোধের ছবি এঁকেছেন। অন্যদিকে খালেক বিন জয়েনউদদীন ছড়া লেখার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু বিষয়ে অসংখ্য মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন। 

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, কবি মোহাম্মদ রফিক এবং ছড়াকার শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন তাঁদের সাহিত্যপ্রতিভা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে তাঁরা এই দেশ গণমানুষের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পালনের চেষ্টা করেছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা ইতিবাচক মনোগঠনে তাঁদের সাহিত্যকর্ম অপরিসীম মিকা রাখবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।। মূল মঞ্চে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জী, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ এবং তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই ন্ড, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার এবং ঝর্ণা রায় ভাবনা। ছাড়াও ছিল আবৃত্তির পরিবেশনা।

আজকের কর্মসূচি ।। আজ রবিবার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে যথারীতি মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবেস্মরণ : স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনশীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তানভীর নেওয়াজ এবং মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।  

×