
পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের আলোকোজ্জ্বল প্রবেশপথ
লুসাইকন্যা কর্ণফুলীর বুকে নতুন ভোরের আলোয় জ¦লজ¦ল করছে পতেঙ্গা। যে আলোর দ্যুতি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ, যা বাংলাদেশকে পৌঁছে দিচ্ছে উন্নত বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাতারে। চলাচলের জন্য প্রস্তুত এ টানেলটির চূড়ান্ত ট্রায়াল হচ্ছে আজ শনিবার। শুধু টানেল নয়, মীরসরাইয়ে ৩৩ হাজার একর জায়গাতে সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগে আসছে ১৫১ প্রতিষ্ঠান।
কর্মসংস্থান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মীরসরাই, ফেনী, সীতাকু-সহ পুরো চট্টগ্রামকেই বদলে দেবে এই শিল্পনগর। এতে কর্মসংস্থান হবে ১৪ লাখেরও বেশি মানুষের। মীরসরাই থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পরিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে নতুন এক বাংলাদেশ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের এক ‘রূপকল্প’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত শিল্পোন্নত লাল সবুজের বাংলাদেশে স্বপ্ন পূরণে বর্তমান সরকারের এটি বৃহৎ সফল উদ্যোগ স্মার্ট এই শিল্পনগরী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হবে ২৮ অক্টোবর। শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় এখন ক্ষণগণনা চলছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আসছেন টানেল পরিদর্শনে। নদীর তলদেশে ১৮ মিটার থেকে ৩১ মিটার নিচ দিয়ে নির্মিত এ টানেল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের একটি প্রকল্প। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এ স্থাপত্য। বিশেষ করে পতেঙ্গা হয়ে আনোয়ারাকে যুক্ত করা এ টানেল ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে ভবিষ্যতে। এর ফলে যোগাযোগ, শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও বিনিয়োগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল যে ৭ উদ্দেশ্যে তৈরি ॥ ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তিসহ সাত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের এ টানেল উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর এ পাতাল পথ সবার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে এ টানেলে গাড়ি চলবে। তবে তিন চাকার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে টানেলে। টানেল এলাকায় গেলে যদি এফএম রেডিও চালু থাকে, তাহলে আটটি এফএম রেডিওতে টানেল ব্যবহারের নির্দেশনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকবে। এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হওয়ায় সবার আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বিশে^র বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের এমন উন্নয়নের উত্থান দেখে বিস্মিত।
যে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সামনে রেখে টানেল নির্মাণ হয়েছে তা হলো চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করা, উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিতকরণ, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা, ঢাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নতুন একটি শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে তোলা এবং কর্ণফুলী নদীর উপরে বিদ্যমান দুটি সেতুর ওপর যানবাহনের বাড়তি চাপ কমানো।
পাল্টে যাচ্ছে দু’প্রান্তের জনপদ ॥ বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার আগেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এখানকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই সুড়ঙ্গপথ। নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। এদিকে টানেলের দুই প্রান্তে এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হওয়ায় সুফল পাচ্ছে আনোয়ারা ও নগরীর বাসিন্দারা। আনোয়ারা প্রান্তে মোট ১১ কিলোমিটার চার লেন প্রস্তুত।
টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, যান চলাচলের উপযোগী টানেল শতভাগ প্রস্তুত। আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন। টানেলে কনস্ট্রাকশন ও মেনটেন্যান্স দুটি ভাগ, সকল কাজ শেষ। টানেলে বায়ু প্রবাহ ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমসহ সাতটি সিস্টেমের কাজ করতে হয়েছে। ট্রায়ালও করেছি নরমাল মুডে।