
শরতেও বর্ষার বৃষ্টি। ছাতা মাথায় চলছেন দুই তরুণী। বৃহস্পতিবার ঢাকার রাস্তা থেকে তোলা
প্রকৃতি বেশ বিভ্রান্ত করছে এখন। অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই। উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। একই কারণে বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে ষড়ঋতু। কোন ঋতুর কী হালচাল সহজে আর বোঝা যাচ্ছে না। শরৎকালে ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে দেদার। বৃহস্পতিবারও রাজধানীর রাস্তাঘাট ছিল ভেজা। এখানে ওখানে জল জমে ছিল। সতর্ক যারা, আগেভাগে হাতে ছাতা নিয়ে বের হয়েছিলেন। তাতেই কিছুটা রক্ষা। বাকিদের কাকভেজা হয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। বৃষ্টি বাড়লে হাঁটা থামিয়ে কাছাকাছি কোথাও আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। কমলে আবার রাস্তায় নেমেছে। আকাশও কখনো কেঁদে ভাসিয়েছে। কখনো ছিল মেঘলা। যখন ঢাকাজুড়ে রাস্তা কাটাকাটি চলছে, যখন দিনরাত কাজ হচ্ছে মেগা প্রকল্পের তখন এমন বৃষ্টি দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
এমনকি বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ান ডে ক্রিকেট ম্যাচটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। খেলা ফেলে ড্রেসিংরুমে বসে থাকতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। অনেক দিন পর ঢাকার মাঠে জমজমাট লড়াইয়ের সম্ভাবনা। দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। তিল ধারণের জায়গা ছিল না গ্যালারিতে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভুগতে হয়েছে তাদেরও। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ পরিস্থিতি বর্ষায় হয়ে থাকে। আর শরৎ একেবারে বৃষ্টিহীন থাকে, না, তা-ও নয়। এ সময়ও বৃষ্টিপাতের নজির আছে। তাই বলে বর্ষার সব বৃষ্টি শরতে বা তার পর হবে? আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড বলছে, বর্ষা শেষেই বৃষ্টি বেশি হচ্ছে এখন। অর্থাৎ, মতি গতি পাল্টেছে আবহাওয়ার। কিন্তু এভাবে পাল্টাতে থাকলে ষড়ঋতুর কী দাঁড়াবে? ফলাফলই বা কী হবে এই পরিবর্তনের? এখনই ভাবা উচিত। সচেতন হওয়া জরুরি।
এত অনিরাপদ ঢাকা! ॥ রাজধানীতে ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটে গেল গত সোমবার। রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে আরামবাগে নিজের বাসায় ফিরছিলেন ভুবন চন্দ্র শীল। প্রতিদিনের মতোই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল তার। কিন্তু এদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। না, সড়ক দুর্ঘটনা নয়। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় হঠাৎই শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত তারিক সাঈদ মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে আরেক দল সন্ত্রাসী। প্রকাশ্যে জনবহুল রাস্তায় এমন ঘটনা। এ ঘটনারই নিষ্ঠুর শিকার হন ভুবন। একটি গুলি তার মাথায় এসে লাগে। প্রথমে তাকে পার্শ্ববর্তী শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাত দেড়টার দিকে ভুবনকে পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করেন স্বজনরা। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। স্ত্রী রত্না রানী শীল এবং মেয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। দুজনেরই চোখ ভেজা। কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কোন ঢাকা? কবে এত বেপরোয়া হয়ে উঠল সন্ত্রাসীরা? সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তার তা হলে কী হবে? এমন ঘটনা এখানেই শেষ? নাকি আরও ঘটতে পারে? অনেকেই শঙ্কায় পড়ে গেছেন। শঙ্কা যে করেই হোক দূর করতে হবে। পুলিশ এবং প্রশাসন কি তৎপর হবে?