বাবার হাত ধরে বেড়ে ওঠা।
বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা তার সারাটি জীবন ব্যয় করেন সন্তান ও পরিবারের পেছনে। তাই, বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজ ১৮ জুন (রবিবার) বিশ্ব বাবা দিবস।
বিশ্বের ১১১টি দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার প্রতি বছর পালিত হয় বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই দিবসটি পালন করা শুরু হয়েছে। প্রতিটি পরিবারই নিজেদের মতো করে পালন করবে দিনটি। সন্তানরা সম্মান জানাবে তাদের বাবাকে।
‘জীবন বিনিময়’ কবিতায় গোলাম মোস্তফা তুলে ধরেছেন সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার হৃদয়স্পর্শী চিত্র। যেখানে সন্তানের রোগমুক্তির আশায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন বাবা।
‘বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর/ পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর!/ চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার।/...মরিল বাবর– না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?/ মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,/ পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়!’
এদিকে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া গান সন্তানদের মনে বাবার অভাব মনে করিয়ে দেয়, যিনি আমাদের জীবনে বটবৃক্ষের বিশাল ছায়া হয়ে বিরাজ করেন।
‘কাটে না সময় যখন আর কিছুতে/ বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/ জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/ মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না/ আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়...’।
১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্য় কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। পরের বছর ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক গির্জায় একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে সন্তানরা মিলে এই প্রার্থনাসভার আয়োজন করে। এটি ছিল বাবাকে সম্মান জানাতে ইতিহাসের প্রথম আয়োজন।
বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীর। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনও বিশেষ দিন ছিল না। সে সময় স্থানীয় গির্জায় ডড মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তারপর তিনি বাবা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ডড তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। মা ছিল না তার। মায়ের মৃত্যুর পর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও তাদের সাত ভাইবোনকে বড় করে তুলেছিলেন তাদের সিঙ্গেল বাবা। বাবার এই ত্যাগ দেখে ডডের মনে হলো, মা দিবসের এত আয়োজন হলে বাবা দিবস কেন বাদ থাকবে। বাবাকে সম্মান জানানোর জন্যও একটা দিন থাকা দরকার।
তারপর অনেক চেষ্টা করে দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে বাবা দিবস পালন করতে পারেন ডড। ১৯১০ সালের ১৯ জুন বিশ্বে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বাবা দিবস।
ওয়াশিংটন থেকে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ দিবস পালনের কথা। আস্তে আস্তে মা দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবসের প্রতিও সচেতন হতে থাকেন সন্তানরা। এরপর ১৯২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলি বাবা দিবসে সম্মতি দেন। তারপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস উদযাপনের কথা ঘোষণা করেন। সবশেষে ১৯৭২ সালে তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটি আইনে স্বাক্ষর করে বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেন।
এম হাসান
