ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি যেন ফিরেছে

গাছতলায় বসে জিরিয়ে নেওয়া, হাতপাখা দিয়ে বাতাস

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৬ জুন ২০২৩

গাছতলায় বসে জিরিয়ে নেওয়া, হাতপাখা দিয়ে বাতাস

তীব্র গরমে গাছের নিচে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ

গ্রামের কথা শহুরে মানুষ আজকাল অত মনে রাখতে চান না। দুই ঈদে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যান বটে। পৈতৃক জমি বিক্রি করে টাকা আনতেও যান অনেকে। পুকুরের তাজা মাছ, গাছের আম কাঁঠাল লিচু বা নিজেদের জমি থেকে পাওয়া চাল বস্তা ভরে ঢাকায় নিয়ে আসতে দেখা যায়। তবে বাকি সময় গ্রামের কথা ভুলে থাকতেই পছন্দ করেন। গ্রামে জন্ম নেওয়া, বড় হওয়া মানুষেরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, তৃণমূলের সংস্কৃতি সম্পর্কে উদাসীন।

একই কারণে অন্যের আচারে অভ্যস্ত তরুণ প্রজন্ম। তবে গত কয়েকদিনে রাজধানীর জনজীবনে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছে। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণেই এমন পরিবর্তন। দেশের অন্যান্য স্থানেও এখন প্রখর রোদ। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তবে রাজধানীতে গরমটা বেশি অনুভূত হয়। মে মাসের শেষ ক’দিন এবং তার পর থেকে এখন পর্যন্ত যারপরনাই গরমাগরম অবস্থা চলছে।   
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন মৌসুমি বায়ু আসার সময়। সাধারণত ৩১ মের মধ্যে এটি উপকূলের টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর পর তা বিস্তার লাভ করে। কিন্তু এবার আসতে দেরি হচ্ছে। এটি  উষ্ণতা বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। গত কিছুদিনের মতো আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার জন্য গরমের অনুভূতিও বেশি হতে পারে। এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎই কেবল কমাতে পবরত দুর্ভোগ। স্বস্তি দিতে পারত। কিন্তু ঢাকাজুড়েই চলছে লোডশেডিং। বিগত দিনে দেখা গেছে, গ্রামেই বেশি হয় লোডশেডিং। শহরে, বিশেষ করে রাজধানীতে বিদ্যুৎ সংকট অত প্রকট হতে সাধারণত দেখা যায় না।

এবারও তা-ই হয়েছে। এর প্রভাবেই রাজধানী শহরে দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ জীবনের ছবি। এখন বাসার বাইরে বের হতে না হতেই গরমে গা ভিজে যাচ্ছে। রোদে পুড়ে যাচ্ছে ত্বক। পথিক তাই হাঁটতে হাঁটতে ছায়া দেয় এমন গাছ খুঁজছেন। যেখানেই ডালপালা ছড়ানো গাছ, তার নিচে বসে পড়ছেন অবলীলায়। রাস্তার ধারে ঝুঁকে থাকা গাছের নিচে, পার্কের গাছতলায় বসে বহু মানুষ প্রাণ জুড়িয়ে নিচ্ছেন। কিছুদূর পর পর এম দৃশ্য দেখে গ্রামীণ জনপদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। গরমের সময় গ্রামের সাধারণ মানুষ গাছের নিচে বসে লম্বা সময় কাটিয়ে দেন। কেউ খালি গায়ে। কেউ গামছা গায়ে দিয়ে গাছের নিচে বসেন। গাছের ছায়া আর মৃদু হাওয়াতেই শরীর জুড়িয়ে যায় তাদের। যেন সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে ঢাকার গাছতলা।      
গ্রামের আরেক ঐতিহ্য হাতপাখা। সব ঘরেই নকশিপাখা থাকে কিংবা তালপাতার পাখা। তবে এখন রাজধানী শহরেও ব্যবহার বেড়েছে হাতপাখার। এত বেড়েছে যে, দেখে অবাক হতে হয়। হ্যাঁ, অনেক বাসা বাড়িতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। আইপিএস, চার্জার ফ্যান বা বাতির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু যাদের এসব নেই তাদের সংখ্যা অনেক বেশি। তা ছাড়া আইপিএস তো বটেই, চার্জার ফ্যানের দামও বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। কেনার সামর্থ হচ্ছে না। ফলে হাতপাখার ব্যবহার আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে। 
গরমের সময় পুকুরে ঘন ঘন ঝাঁপিয়ে পড়ার কথাও তো কারও অজানা নয়। সেই দুরন্ত শৈশবের ছবি এখন ঢাকাতেই দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর বংশালে একটি পুকুর আছে। সেই পুকুরে সাঁতার কাটছে মানুষ। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য খালে ঝিলে সাঁতরাচ্ছে দুরন্ত কিশোররা। 
একইভাবে মোমবাতির ক্ষীণ আলো মনে করিয়ে দিচ্ছে টিমটিম করে জ্বলা হারিকেনের কথা। লক্ষ্য করলে আরও অনেক পরিবর্তন চোখে পড়বে। এসব পরিবর্তন দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। মানতেই হবে। তবে গ্রামের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে।

×