ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিনেপ্লেক্স নির্মাণ শুরু

হলে গিয়ে সিনেমা দেখা অতীতের মধুময় অধ্যায় 

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২ জুন ২০২৩

হলে গিয়ে সিনেমা দেখা অতীতের মধুময় অধ্যায় 

.

নগরীতে হলে গিয়ে সিনেমা দেখা- অতীতের মধুময় স্মৃতির অধ্যায় হয়ে আছে। একদা প্রতিটি নগরীতে ছিল একাধিক সিনেমা হল। বাইরে থেকে দর্শকরা এসে সিনেমা দেখে ফিরতেন। পরিবার নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখাছিল সামাজিক বিনোদন। ষাটের দশকে সিনেমা দেখাকে বলা হতোবই দেখা অনেক সিনেমা ছিল সাহিত্য নির্ভর। নগরীতে কোনো সিনেমা হলে কখন নতুন ছবি মুক্তি পাবে নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিল বেশি। ভালো ছবি দেখা নিয়ে হলের টিকিট কাউন্টারে সে আরেক দৃশ্য। টিকিটের জন্য প্রচন্ড ভিড়ে কুস্তি করে কাউন্টারের ছোট খোপে হাত ঢুকাতে হতো। সুযোগটি নিত কালোবাজারিরা (ব্ল্যাকার) বেশি দামে টিকিট বিক্রি করত। মধ্যবয়সীদের কাছে এই দৃশ্যগুলো আজ মনের মুকুরে আসন করে নিয়েছে। সেদিনের সেই সিনেমাহলগুলো আর নেই।

প্রজন্মের কাছে সেদিনের সিনেমা হল অচেনা। কালেভদ্রে সিনেপ্লেক্সে গিয়ে ছবি দেখে। তাদের কাছে পরিচিতিমুভি দেখা বড় পর্দার সিনেমা তাদের কাছে টানে না। স্মার্ট ফোনে বিনোদনের সব উপকরণ পায়। ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের অ্যাপসগুলো সাবস্ক্রাইব করে যখন ইচ্ছে তখন নাটক, মুভি দেখে। ওরা সেদিনের সিনেমা হলের গল্প শুনলে হেসে লুটিপুটি খায়। বগুড়া নগরীতে প্রজেক্টর যুগের সিনেমা হল নেই। বছর দুয়েক আগে মধুবন সিনেমা হলের বর্তমান স্বত্বাধিকারী তরুণ রোকনুজ্জামান ইউনুস রুবেল সুদূরপ্রসারি ভাবনায় অত্যাধুনিক শিল্পকলায় সিনেপ্লেক্সে রূপান্তর করেন। অতি উন্নত ম্যাগনিফিন্টে পর্দায় দর্শকরা স্বস্তিতে ছবি দেখেন। বগুড়ার সিনেমা হলগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মার্কেটে পরিণত হয়েছে। বিভাগীয় মহানগরী রাজশাহীতে সিনেমা হল নেই। তবে সিনেমা হলগুলোর নামে চওড়া সড়কের মোড়ের নাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে। যেমন বর্ণালীর মোড়, অলোকা কল্পনার মোড়, উপহার কমপ্লেক্স। রাজশাহীতে হালে নির্মিত হয়েছে একটি সিনেপ্লেক্স। এভাবে নগরীগুলোতে সেদিনের রিল প্রজেক্টর যুগের সিনেমা হল অপসারিত হয়েছে।

কেমন ছিল সেদিনের সিনেমা হল : আগে ছবি নির্মিত হতো ঢাউস মুভি ক্যামেরায় ৩৫ মিলিমিটার সাদাকালো রঙিন ফিল্মে (সেলুলয়েডের ফিতা) প্রতি এক হাজার ফুটের রিলে চিত্রগ্রহণ করে পরিস্ফূটনের পর মুদ্রণ করা হতো। একেকটি ছবির দৈর্ঘ্য হতো ১২ হাজার ফুট থেকে ১৬ হাজার ফুট। দুই ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ছবিগুলো দশ থেকে ২০টি কপি করে মুক্তি পেত দেশের নগরীর একটি বা দুটি করে সিনেমা হলে। প্রতিটি সিনেমা হলে বিশাল সাইজের দুইটি প্রজেক্টর থাকত। একেকটি প্রজেক্টরে চারটি করে রিল পেঁচিয়ে কার্বন লাইটে বিশাল পর্দায় প্রক্ষেপণ করা হতো। একটি প্রজেক্টরের রিল শেষ হলে রেডি রাখা দ্বিতীয় প্রজেক্টর চালু হতো। বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সে প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে সেদিনের একটি প্রজেক্টর।

একবিংশ শতকে প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে ডিজিটাল ডিভাইসে মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার প্রজেক্টরে পেনড্রাইভ বা চিপসে ছবি ভরে বড় পর্দায় ছবি প্রদর্শিত হয়। ছবি নির্মিত এবং সম্পাদিত হয় হাই ডেফিনেশনের উচ্চ শক্তির রেজুলশেন ক্যামেরায় ডিজিটাল ফর্মেটে। মহানগরী ঢাকা বগুড়াসহ কয়েকটি নগরীর সিনেপ্লেক্সে বিশ্বের নানা দেশের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। সিনেপ্লেক্স পরিবেশ উন্নত থাকায় দর্শকরা মুভি দেখতে যাচ্ছে। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি।

১৯৯০ সালে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১৪৩৫টি। বর্তমানে এই সংখ্যা ৯১টি। চালু আছে ৬২টি। সিনেমা হল ভেঙ্গে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান শপিং মল। হালে ডিজিটাল ডিভাইসে প্রদর্শনের সিনেপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। এই সিনেপ্লেক্স দর্শক টানছে ঠিকই। তবে প্রবেশমূল্য বেশি হওয়ায় দর্শক হোঁচট খাচ্ছে। সূত্র জানায় দেশের প্রতিটি জেলায় সিঙ্গেল স্ক্রিন মাল্টি স্ক্রিনের সিনেপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে।  

ঢাকায় স্থাপিত এফডিসি থেকে পঞ্চাশের দশকে প্রথম নির্মিত সবাক ছবি আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত মুখ মুখোশ। ছবিটি মুক্তি পায় ঢাকার প্রথম সিনেমা হল শাবিস্তানে (আগে নাম ছিল পিকচার হাউস) এর আগে ১৯৩১ সালে ঢাকায় নির্মিত নির্বাক ছবি দ্য লাস্ট কিস মুক্তি পায়। অতীতে এই দেশে ভারত হলিউড পাকিস্তানি ছবির প্রদর্শন ছিল। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে এফডিসি থেকে নির্মিত অনেক ভালো ছবি প্রশংসিত হয়। মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। চলচ্চিত্র ছিল বিনোদনের সঙ্গে ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি সমাজ সংস্কারের বড় মাধ্যম।

 

×