
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তীতে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবি পরিবারের সদস্যরা
বাংলা পঞ্জিকার হিসাবে বৃহস্পতিবার এগারো জ্যৈষ্ঠ ছিল গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াকু কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী। ধর্মের পরিচয় ছাপিয়ে মানবতার মর্মবাণীতে উদ্যাপিত হলো কবির জন্মদিন। উচ্চারিত হলো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উপড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক স্বদেশ গড়ার প্রত্যয়। সহিংসতার আস্ফালন ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে যখন আক্রান্ত দেশ, তখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতায় উপস্থিত হলেন নজরুল। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে কিংবা বক্তার কথায় সাম্য ও সম্প্রীতির বারতায় উদ্্যাপিত হলো নজরুলজয়ন্তী। সকাল থেকেই শুরু হয় মানবতার কবিকে অঞ্জলি অর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শাহবাগের চারুকলা অনুষদসংলগ্ন কবির সমাধি।
ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বর্ণিল নানা অনুষ্ঠানে গান, কবিতা ও কথায় স্মরণ করা হয় কবিকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপনের সমান্তরালে ছিল নানা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন। জাতীয় পত্রিকাগুলো গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে নজরুলজয়ন্তীর প্রতিবেদন থেকে শুরু করে নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা। সব মিলিয়ে দিনটি ছিল নজরুলময়। অনুরাগীদের অন্তরের গহিন ভালোবাসা ও বন্দনায় কেটেছে মানবতা ও সাম্যের কবির জন্মদিন। দিনভর নানা আয়োজনে ঢাকাসহ সারাদেশে হৃদয়ের উষ্ণতায় উদ্যাপিত হয়েছে জাতীয় কবির জন্মদিন। প্রতিটি আয়োজনে ছিল নজরুলকে নতুন করে আবিষ্কারের অবিরাম প্রচেষ্টা। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে আয়োজন করে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। এ ছাড়া কবির স্মৃতিতাড়িত কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কবির জন্মদিন উদ্যাপিত হয়।
কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ সূর্যোদয়ের পর পরই শুরু হয় জন্মদিনে কবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে কবিকে স্মরণ কর্মসূচির সূচনা হয়। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ বাহারি ফুলের তোড়ায় ছেয়ে যায় সমাধিসৌধ। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সূচনা হওয়া শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বে কবি পরিবারের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কবির নাতনি খিলখিল কাজী। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীকী প্ষ্পুাঞ্জলি অর্পণ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
নজরুলজয়ন্তীর নানা আয়োজন ॥ নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুমাত্রিক কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার থেকে ছায়ানটের আয়োজনে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব। একইভাবে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় নজরুল একাডেমি আয়োজিত তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা।
ছায়ানটে নজরুল উৎসব ॥ নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছায়ানটে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। একক ও সম্মেলক সংগীত, নৃত্য, পাঠ ও আবৃত্তির সম্মিলনে সজ্জিত হয়েছে নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এ উৎসব। শুরুতেই পরিবেশিত হয় ‘হে পার্থসারথি বাজাও বাজাও’ শীর্ষক সমবেত নৃত্যসংগীত। এরপর কথনে অংশ নেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায়’ শীর্ষক সংগীত পরিবেশন করেন নুসরাত জাহান রুনা। এ ছাড়া একক সংগীত পরিবেশন কেেরন মৌসুমী সাহা, শহীদ কবির পলাশ, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, প্রিয়াংকা গোপ, শর্মিষ্ঠা দাশ, শ্রাবন্তী ধর, লায়েকা বশির প্রমুখ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী মদিনা ও রফিকুল ইসলাম। সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ। ছায়ানটের শিল্পীদের সঙ্গে আয়োজনে অংশ নিচ্ছে আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।