
ফুটেছে সোনারঙা সোনালু
সোনালু ফুলে চারপাশটা কেমন ভরে উঠেছে! দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতি বা ফুলপ্রেমীরা তো বটেই, অতি সাধারণ ভোঁতা অনুভূতির মানুষও ফুলটির দিকে এখন তাকাচ্ছেন। একদমই এড়ানো যাচ্ছে না এই সৌন্দর্য, বরং মন নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠছে, ‘এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...।’ কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া রাজধানীবাসীর জীবন সত্যি ভরিয়ে দিয়েছে এই ফুল। কারণ এই শহরের রাস্তার ধারে, পার্কে, ঝিলপাড়ে অজস্র গাছ। সব গাছেই ফুলের সমারোহ। যাতায়াতের সময় চোখ সেদিকে যাবেই। যাচ্ছে না? হাইকোর্ট এলাকায় একবার ঢুঁ মারতে পারেন। বিস্ময় আরও বেড়ে যাবে। সোনালুর রঙে কোনো কোনো এলাকার চেহারা বদলে গেছে। হাতিরঝিল, রমনা পার্ক বা ক্রিসেন্ট লেক এলাকা ঘুরে আসতে পারেন। মানিক মিয়া এভিনিউতে গেলেও দেখা যাবে। সরু পথ বা অলি-গলিতেও সোনালু চোখে পড়ছে এখন।
হ্যাঁ, সোনালু ঘরোয়া বাগান বা টবে ফোটা ফুল নয়। বেশ উঁচু এবং বড়সড় গাছ। ছড়িয়ে থাকা ডালপালা। তবে গাছ বা ডালপালা দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। ফুল আর ফুল ফোটে আছে শুধু! ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা ঝুলন্ত মঞ্জুরি গ্রীষ্মের মৃদু বাতাসে সুন্দর দোল খাচ্ছে!
কাছ থেকে দেখলে পাপড়ির রং কাঁচা হলুদ বলে মনে হয়। প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি হয়ে যায় সোনালি। এ কারণেই নাম সোনালু। আর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার। ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতো দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে
অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রিক ভাষা থেকে নেওয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো হয়ে যায় গাছ। প্রাণহীন দেখায়। বৈশাখে ফুল ফোটে। তখন থেকে আমূল বদলে যেতে থাকে সব। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির।
যতদূর তথ্য, সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে বানরলাঠিও বলা হয়। নিঃসন্দেহে কুৎসিত নাম। তবে এর একটি কারণও আছে। সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেই ‘বানরলাঠি’ বলা। ফলের প্রসঙ্গ যেহেতু উঠলই, বলি, সোনালুর ফল এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধি গুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা হজমের সমস্যায় উপকারী।
তবে ঔষধি গুণের কথা আপাত না ভাবলেও চলবে। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। গ্রীষ্মজুড়েই থাকবে সোনালু। এর পরও কিছুদিন দেখা যাবে। তবে এখন সবচেয়ে তাজা। তাজা থাকতেই কেন দেখবেন না?