ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলায় পছন্দের বই খোঁজায় ব্যস্ত ক্রেতা

এখন শীতকাল। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় বহুবিধ উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে অমর একুশে বইমেলা মানেই অন্য রকম আবেগ। সেই আগের বহির্প্রকাশ ঘটছে এখন। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে মেলা। বৃহস্পতিবার ছিল দ্বিতীয় দিন। এদিনও বইয়ের মানুষেরা কৌতূহলী চোখে মেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিয়ম মেনে বেলা ৩টায় দ্বার খুলে দেওয়া হয়। তখন থেকেই প্রবেশ শুরু। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকেই ছিল মূল স্রোত।

প্রথম ঢুকে মেলার বিন্যাস বোঝার চেষ্টা করেন অনেকে। নানা জিজ্ঞাসা নিয়ে চারপাশে তাকান। কোন পাশে কী আছে, বোঝার চেষ্টা করেন। এবার বাংলা একাডেমির উল্টো পাশ দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ছে শিশু চত্বর। এ চত্বরে শিশু-কিশোরদের উপযোগী প্রকাশনা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্টল সাজিয়েছে এখানে। শিশু চত্বর থেকে বের হয়ে মূল উদ্যানে যেতে মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা। তার পরই হাতের বামে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাতিঘর। একই সারিতে অন্য প্রকাশ, সালাউদ্দিন বই ঘর, জনান্তিক, ভাষাচিত্র, মাওলা ব্রাদার্স, আগামী, জার্নিম্যান বুকস।

বাম দিকের একটি সারিতে সময়, অনন্যাসহ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন। টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশ দ্বার দিয়ে মেলায় ঢুকলে চোখে পড়ে কাকলী, এশিয়া পাবলিকেশন, শিরিন পাবলিশার্স, বইঘর, পাঠক সমাবেশ, পাঞ্জেরী, প্রথমা, শ্রাবণ, অনিন্দ্য। এ পথে মেলায় ঢুকে একটু বাঁয়ে গেলে লিটল ম্যাগ চত্বর। মেলার দ্বিতীয় দিন নিজেদের চেনা-জানা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন পাঠকরা। তার পর বই দেখার পালা।

হাঁটতে হাঁটতেই কোনো একটি স্টলের সামনে গিয়ে থামতে দেখা যাচ্ছিল তাদের। বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে আকর্ষণ বোধ করলে হাতে নিচ্ছিলেন সেটি। পাতা উল্টে দেখছিলেন। পাঠক আয়েশী ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়ালেও প্রকাশকদের সবার সে সুযোগ ছিল না। একদিন আগে শুরু হওয়ায়, অনেকেরই স্টল গোছানোর কাজ বাকি ছিল। সে কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা। বেশ কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, আগে প্রকাশিত প্রায় সব বই ডিসপ্লেতে রেখেছেন তারা। বিশেষ করে যেসব বই পাঠকের পছন্দের তালিকায় আছে, সেগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেছেন।

আর নতুন প্রকাশনাগুলো একেবারে হাতে নিয়ে দেখাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। মেলায় চলছে গল্প-আড্ডাও। কোনো কোনো স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে অস্থায়ীভাবে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, আজ শুক্রবার। অর্থাৎ মেলা শরু হতে না হতেই ছুটির দিন পাওয়া গেল। এ দিনটি নিশ্চিতভাবেই কাজে লাগাতে চাইবেন বইপ্রেমীরা। ফলে লোক সমাগম বাড়বে। বাড়বে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মেলায় কথা হচ্ছিল অ্যাডর্ন-এর কর্ণধার সৈয়দ জাকির হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, তৃতীয় দিনটি শুক্রবার। এটা অবশ্যই ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, ছুটির দিনে অনেক বেশি পাঠক মেলায় আসবেন। তারা এলেই তো আসলে পরিপূর্ণ একটা রূপ পায় আয়োজনটি। 

শিশু প্রহরে আজ ১১টায় খুলবে মেলার দ্বার ॥  আজ মেলার প্রথম শিশু প্রহর। অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা একটা সময়। সময় শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে। একই সময় খুলে দেওয়া হবে মেলার প্রবেশদ্বার। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলছেন, সাধারণ সময়ে সব বয়সীর মানুষ আসেন। বাড়তি ভিড় থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমনটি হয় না। তাই শিশুরা বই দেখে, সংগ্রহ করে চমৎকার সময় কাটাতে পারে। খৃদে পাঠকদের জন্য এ সময় আকর্ষণীয় নানা আয়োজন থাকবে বলেও জানান তিনি। 
বেঙ্গল শিল্পালয়ে শীত বৈঠক ॥ ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আজ শীত বৈঠকের আয়োজন করা হবে। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয় এই বৈঠকের আয়োজন করছে। যারা বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের কথা ভুলে যাননি তাদের জন্য বলা, সেই  উৎসবে গান শোনার অনুভূতি কিছুটা হলেও ফিরে পেতে পারেন শীত বৈঠক থেকে। কারণ এ আয়োজনটি শাস্ত্রী সংগীতের। ধ্রুপদ, সেতার, খেয়াল ও সরোদ উপভোগ করা যাবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন। একই দিন গুলশানে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব। এ উৎসবটিও খুব জাঁকজমকপূর্ণ। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা গাইবেন। উপভোগ করুন আয়োজনটি। 

×