
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মহাকালের তর্জনী
তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। আর রাজনীতির সেই কবিকে নিয়ে রচিত হয়েছে অজস্র কবিতা। সেসব পঙ্ক্তিমালায় উচ্চারিত হয়েছে বাংলার অবিসংবাদিত নেতার আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের মহিমান্বিত বর্ণিল জীবন অধ্যায়। সেই সুবাদে জীবদ্দশাতেই তিনি পেয়েছেন কবিদের কাব্যিক ভালবাসা। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বিবেকের কণ্ঠস্বরে পরিণত হন বাংলার কবিকুল। প্রতিবাদী সেই কাব্যভাষায় পৌরাণিক ও কিংবদন্তির মহানায়কের মতো বিজয় এবং চিরন্তন শোকের প্রতীকে পরিণত হন শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় এবং পঁচাত্তর পরবর্তী তাঁকে নিয়ে রচিত প্রতিবাদী কবিতাসমূহ ঠাঁই পেয়েছে একটি সংকলনে। দুই বাংলার ১৫০ জন খ্যাতিমান কবির কবিতা নিয়ে সজ্জিত হয়েছে গ্রন্থটি। মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা শিরোনামের বইটি প্রকাশ করেছে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। গবেষণালব্ধ কাব্যগ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন কবি কামাল চৌধুরী। বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কবি ও কথাশিল্পী আনিসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি কামাল চৌধুরী।
কাব্যগ্রন্থটির প্রশংসা করে দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতার বই বা সংকলন। সেসব কাব্যগ্রন্থের মধ্যে এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো কীভাবে, কোন প্রেক্ষাপটে ও কবে লেখা হয়েছিল তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর কীভাবে কবিতার ভাষায় হয়েছিল প্রতিবাদ। এমনকি ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শাহ আবদুল করিম যে গান লিখেছিলেন সেই তথ্যও মেলে বইটিতে। আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবুল ফজলের লেখা ‘মৃতের আত্মহত্যা’ নামের গল্পের কথা।
কামাল চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে এত কবিতা লেখা হয়নি। তাঁকে যারা দেখেছেন তারাও লিখেছেন এবং যারা দেখেননি তারাও লিখেছেন। এখনও রচিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিতা কবিতা। কারণ বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে আমাদের অহংকারের প্রতীক ও চিরন্তন শোকের উৎস। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং তার পূর্বে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক কবিতা।
এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বিবেকের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন কবিরা। সেই অবরুদ্ধ সময়ে কবিতার ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবিরা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কবিতা লেখা হয়েছে সেগুলো থেকে বাছাই করে উৎকৃষ্ট কবিতাগুলো ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের সময় থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রচিত দুই বাংলার প্রখ্যাত কবিদের কবিতা। সেসব কবিতা কোথায় ও কবে ছাপা হয়েছে সে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু নিয়ে রচিত কবিতার সংকলনের মধ্যে এটি ভিন্নতম।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার আপন কীর্তির মধ্য দিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতির উপাদানে পরিণত হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছে কবিতা। এমনকি তার সাতই মার্চের ভাষণ কাব্যরীতির ভাষায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, কবি কামাল চৌধুরীর গবেষক সত্তার প্রমাণ রেখেছে এই কাব্যগ্রন্থ। বইটি সম্পাদনা করতে নিয়ে তিনি গবেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কাব্যগ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সুন্দর। যারা বই পড়তে পছন্দ করেন তাদের ঘরে অবশ্যই বইটি থাকা উচিত।
মাসুদুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা রচনার প্রামাণ্য ইতিহাস এই সংকলনটি। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের সুনির্বিাচিত কবিতা ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালীর জাতিগত আবেগের কম্পন অনুভূত হয়েছে এ কাব্যগ্রন্থে।
মাহ্রুখ মহিউদ্দীন বলেন, কবি কামাল চৌধুরীর দীর্ঘ শ্রমের ফসল এই কাব্যগ্রন্থ। বইটির মাধ্যমে আমরা নতুন কিছু দিতে চেয়েছি পাঠকেকে। ইতিহাসের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার সংকলন এই বইটি।
বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা।