ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অতীতের ঐতিহ্যে গাঁথা দত্ত সাহেবের জমিদার বাড়ি – টঙ্গীর এক নীরব ইতিহাস

রাহাত শেখ কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৩ মে ২০২৫

অতীতের ঐতিহ্যে গাঁথা দত্ত সাহেবের জমিদার বাড়ি – টঙ্গীর এক নীরব ইতিহাস

ছবিঃ দত্ত সাহেবের জমিদার বাড়ি

গাজীপুরের টঙ্গী অঞ্চলের এরশাদনগরের ভেতর দিয়ে হাঁটলেই চোখে পড়ে একটি পুরনো, অথচ গর্বিত স্থাপনা—দত্ত সাহেবের জমিদার বাড়ি। স্থানীয়ভাবে এটি ‘দত্তপাড়া জমিদার বাড়ি’ বা ‘দত্ত সাহেবের বাড়ি’ নামেই পরিচিত। এই বাড়িটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি টঙ্গীর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জমিদারী ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল।

জমিদার দত্ত সাহেব ছিলেন ভাওয়াল জমিদার বংশের একজন সদস্য। ধারণা করা হয়, ব্রিটিশ আমলের শেষভাগে বা পাকিস্তান আমলের সূচনালগ্নে তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। দেশ বিভাগের পরও দত্ত সাহেব এই বাড়িতে বসবাস করেন দীর্ঘদিন। ১৯৬৪ সালের দিকে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান, তবে রেখে যান ইতিহাসের এক অমূল্য নিদর্শন।

দ্বিতল এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়েছে ইট, সুরকি ও রড দিয়ে। লালচে রঙের দেওয়াল, উচ্চ ছাদ আর খোদাই করা কাঠের দরজাগুলো যেন আজও সেই জমকালো দিনের সাক্ষ্য বহন করে। বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি বড় দীঘি, যা এক সময় ছিল জমিদার পরিবারের জলস্নানের স্থান। দীঘিটি এখনো এলাকাবাসীর কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

বর্তমানে বাড়িটি একটি বেসরকারি সংস্থার অধীনে পরিচালিত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বাড়িটি পরিত্যক্ত না হয়ে সংরক্ষিত রয়েছে, যদিও ইতিহাসপ্রেমীদের মতে এটির সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা উচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা ও গবেষকরা মনে করেন, এই বাড়িটি শুধু দত্ত সাহেবের স্মৃতি নয়, এটি এই অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতিরও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এমন একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা পর্যটন ও গবেষণার স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়দের আহ্বান—সরকার যেন উদ্যোগ নেয় যথাযথ সংরক্ষণের।

অতীতের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। তবে দত্ত সাহেবের জমিদার বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যেন বলছে—"আমি ছিলাম, আছি, থাকবো... টঙ্গীর গর্ব হয়ে।"

নোভা

×