ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফুলতলী সমুদ্র সৈকত: আনোয়ারার নিভৃত রত্ন এখন ভাইরাল পর্যটন কেন্দ্র

মোঃ আবু তালেব, কন্ট্রিভিউটিং রিপোর্টার, আনোয়ারা,চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ০৮:১৪, ২৩ মে ২০২৫

ফুলতলী সমুদ্র সৈকত: আনোয়ারার নিভৃত রত্ন এখন ভাইরাল পর্যটন কেন্দ্র

ছবি- ফুলতলী সমুদ্র সৈকত

সমুদ্রের ঢেউ আর ঝাউবনের ছায়ায় প্রেমময় একটি নতুন ঠিকানা এখন পর্যটকদের কাছে; ফুলতলী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত এই সৈকতটি সাম্প্রতিক সময়ের নেটিজেনদের মন কেড়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নান্দনিক বসার স্থান ও নিরিবিলি পরিবেশের কারণে। 

পারকি সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত ফুলতলী বিচ যেন তারই এক পরিপূরক এবং এটি এক্সট্রা বোনাস হিসেবে ধরা দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময় এখানকার দৃশ্য যেন এক প্রেমময় কবিতা, যেখানে প্রকৃতি ও ভালোবাসা হাতে রেখে হেঁটে চলে। হালকা কুয়াশা কিংবা কোমল রোদের চাদরে মোড়া সকালে ঢেউ প্রতিরোধক পাথরের সারি, লাল ছাউনির বিশ্রামাগার আর পাশেই নারকেল গাছঘেরা শান্ত জলাশয় সব মিলিয়ে একটি স্বপ্নীল পরিবেশের জন্ম দিয়েছে এই বিচ।

ফুলতলী সমুদ্র সৈকত এখন ভাইরাল একটি নাম, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আনোয়ারার পরুয়াপাড়া গ্রামের রায়পুর ইউনিয়নের এ সৈকতটি পারকি থেকে মাত্র ১০–১৫ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত। চাইলে হাঁটাহাঁটি করেই কিংবা রিকশা বা সিএনজিতে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। যারা চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখতে যান সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে নিমিষেই ফুলতলীর পর্যটন স্পটটি ঘুরে আসতে পারে, এই স্থানটি শহর থেকে সবচেয়ে কাছের একটি সমুদ্র গন্তব্য। শাহ আমানত সেতু পেরিয়ে চাতুরী চৌমুহনী হয়ে মাত্র ২০–২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায় পারকি, সেখান থেকে ফুলতলী বিচ। কাফকো সেন্টার বাজার পর্যন্ত বাসে গিয়ে সিএনজিতে রিজার্ভ নিয়ে পৌঁছানো যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আগত পর্যটকদের জন্য রয়েছে খোলা মাঠ, বড় পুকুর, সারি সারি ঝাউগাছ, আর আশপাশে মাছের ঘের ও সবুজের সমারোহ। সব মিলিয়ে ফুলতলী বিচ নিঃসন্দেহে এক প্রাকৃতিক শান্তির আবাস।

পর্যটন সুবিধা প্রসঙ্গে বলতে গেলে, ফুলতলী সৈকত এখনও পুরোপুরি বাণিজ্যিক রূপ না পেলেও, পর্যটকের চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বিশ্রামাগার, ভিউ পয়েন্ট ও ফুড স্টলসহ রয়েছে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট, যেখানে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। সন্ধ্যা নামলেই এখানকার আলোকসজ্জা নজর কাড়ে, বিশেষ করে লাল ছাউনির আশ্রয়স্থলে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রাতযাপনের সুযোগও আছে পারকির লুসাই পার্কের তাবু ও কটেজগুলোতে। বিবাহিত দম্পতিরা চাইলে নিরিবিলি পরিবেশে রাত্রি কাটানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে এখানে এখনো সরকারি পর্যটন সুবিধা সীমিত, যদিও একটি সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

সতর্কতা অবশ্যই জরুরি। যেকোনো নতুন গন্তব্যে ভ্রমণ করতে হলে জানতে হবে কিছু প্রয়োজনীয় দিক। যেমন, জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সমুদ্রে নামা, সন্ধ্যার পর একা সৈকতে না থাকা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেওয়া। কারণ, সৈকতে কৃত্রিম আলো বা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া, আশপাশে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। তবে কর্ণফুলী থানার পুলিশের তৎপরতা এবং পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার মানোন্নয়ন হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

ফুলতলী সমুদ্র সৈকতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। নিরিবিলি পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শহরের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় এটি দ্রুতই একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বিশেষ করে যারা কোলাহলপূর্ণ কক্সবাজার বা পতেঙ্গার ভিড় এড়িয়ে নির্জনতা উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য ফুলতলী হতে পারে আদর্শ এক গন্তব্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানকার সামগ্রিক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এমন এক অনুভবের জন্ম দেয়, যা হৃদয়ে দীর্ঘকাল বয়ে বেড়ানো যায়। ফুলতলী যেন এক নীরব কবিতা, প্রকৃতি যেখানে ভালোবাসার শব্দ খোঁজে।

নোভা

×