ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অ্যাপেই সব! শহরের মানুষ কি তবে বাস্তব জীবন ভুলে যাচ্ছে?

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২২ মে ২০২৫

অ্যাপেই সব! শহরের মানুষ কি তবে বাস্তব জীবন ভুলে যাচ্ছে?

সংগৃহীত

সকালে ঘুম ভাঙে অ্যালার্ম অ্যাপে। ঘুম চোখে খাবার অর্ডার দিই ফুড ডেলিভারি অ্যাপে। অফিসের কাজ, ব্যাংকিং, শপিং, গল্প, প্রেম, বিনোদন—সবই মোবাইলের স্ক্রিনে। একসময় যেখানে জীবনের প্রতিটি ধাপে মানুষে মানুষে যোগাযোগ ছিল অপরিহার্য, সেখানে এখন কিছু ট্যাপ আর সোয়াইপেই চলছে পুরো শহর। আমরা কি প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছি, না কি অজান্তেই স্ক্রিনের দাস হয়ে যাচ্ছি?

অফিসে যেতে আর রিকশা খুঁজতে হয় না—এক ক্লিকেই পৌঁছে যায় রাইডশেয়ার। বাজারে গিয়েই দরদাম করতে হয় না—অ্যাপে এক্সপ্লোর করে অর্ডার প্লেস করলেই দরজায় পৌঁছে যায় সবজি বা মাছ। চিকিৎসকের সিরিয়াল, স্কুলের ক্লাস, এমনকি পাড়ার মুদিদোকানও এখন চলে মোবাইল অ্যাপে। বলা যায়, শহুরে জীবনের প্রতিটি অংশ আজ অ্যাপস-নির্ভর হয়ে উঠেছে।

শুধু ঢাকাই নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী কিংবা খুলনার মতো বড় শহরগুলোতেও চলছে একই অবস্থা। ব্যাংকে লাইন নেই, আছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। সিনেমা হলে না গিয়ে, নেটফ্লিক্স বা ওটিটি-তে চলছে বিনোদনের ধারা। আর প্রেম? সেটাও শুরু হচ্ছে ইনবক্সে, শেষ হচ্ছে ব্লক-লিস্টে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ একদিকে যেমন সময় বাঁচাচ্ছে, সেবা পৌঁছে দিচ্ছে হাতের মুঠোয়, অন্যদিকে বাড়াচ্ছে নির্ভরশীলতা। তবে অনেকেই বলছেন, জীবন সহজ হওয়াটাই তো প্রযুক্তির উদ্দেশ্য। ধানমন্ডির গৃহবধূ আফরোজা হক (ছদ্মনাম) বলেন, “আমার ছেলেটা দেশের বাইরে পড়ে। একসময় ফোনে কথা বলতাম, এখন ভিডিও কলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। এটা তো বড় সুযোগ।

তবে সব সুবিধার মাঝেও কিছু অস্বস্তির জায়গা থেকেই যায়। স্ক্রিনে বন্দী জীবন মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে, কমছে সামাজিক মেলামেশা। শিশুরাও খেলাধুলার মাঠ ভুলে যাচ্ছে, অভ্যস্ত হচ্ছে ভার্চুয়াল গেমে।

অ্যাপস আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর নির্ভরতাও তৈরি করেছে নতুন এক জগত, যেখানে আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই একাকী হয়ে যাচ্ছি। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—সবকিছুই কি এখন স্ক্রিনে, নাকি এখনও কিছু অনুভবের জায়গা বাকি আছে বাস্তবের স্পর্শে?

মিমিয়া

×