ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিঠাপুকুর বড় মসজিদ: রংপুরের এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন!

মোঃ সুজা উদ্দিন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রংপুর 

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৩ মে ২০২৫

মিঠাপুকুর বড় মসজিদ: রংপুরের এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন!

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন, মিঠাপুকুর বড় মসজিদ, যা স্থানীয়ভাবে মিঠাপুকুর তিন কাতারের মসজিদ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত এই প্রাচীন স্থাপনাটি মোঘল আমলের শেষ দিকের স্থাপত্যশৈলীর এক অনবদ্য উদাহরণ। 

ধারণা করা হয়, ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে (১২২৬ হিজরী) শেখ মোহাম্মদ সাবেরের পুত্র শেখ মোহাম্মদ আছের এটি নির্মাণ করেন, যার প্রমাণ মসজিদের সামনের দেয়ালে খোদাই করা শিলালিপি থেকে পাওয়া যায়।

স্থাপত্যশৈলীর অনন্যতা:
১০.৬৬ মিটার পরিমাপের আয়তাকার এই মসজিদটি তিনটি অর্ধগোলাকার গম্বুজ দ্বারা শোভিত, যা দুটি ল্যাটারাল খিলানের সাহায্যে তিন ভাগে বিভক্ত। মসজিদের চার কোণে রয়েছে চারটি কোণার টাওয়ার, যা ছাদের কিনারা থেকে বেশ ওপরে উঠে ছোট গম্বুজের মতো কিউপোলা আকারে শেষ হয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথের দিকে তাকালে চোখে পড়ে এক অপূর্ব দোচালা পদ্ধতির তোরণ, যা বাংলাদেশের নিজস্ব স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের এক চমৎকার উদাহরণ। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে, যা মসজিদের ভেতরের বিশালতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

অলংকরণে শিল্পকর্ম:
মিঠাপুকুর বড় মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এর মনোমুগ্ধকর অলংকরণ। মসজিদের তিনটি মিহরাব, সামনের দেয়াল, প্যারাপেট দেয়াল এবং গম্বুজের ড্রামগুলো সুন্দর প্যানেল, লতাপাতা, ফুল, জ্যামিতিক নকশা এবং সাপের ফনার মতো নকশা দ্বারা সুচারুভাবে সজ্জিত। এই নকশাগুলো মোঘল স্থাপত্যের বর্ধিষ্ণু শিল্পরুচির পরিচায়ক এবং সময়ের সাথে সাথে টিকে থাকা এক শিল্পকর্ম।

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী:
মিঠাপুকুর বড় মসজিদ শুধু একটি মসজিদই নয়, এটি রংপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী। এটি প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ইতিহাসবিদদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ক্ষেত্র। এর নির্মাণশৈলী এবং অলংকরণ সেই সময়ের সমাজ, সংস্কৃতি এবং শিল্পরুচি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

মসজিদটি স্থানীয়দের কাছেও গভীর শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি রংপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং স্থাপত্যিক সৌন্দর্যের কারণে স্থানীয় এবং পর্যটক উভয়কেই আকর্ষণ করে। এটি কেবল ধর্মীয় স্থান নয়, বরং একটি জীবন্ত জাদুঘর, যা অতীতের গল্প শোনায় এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মকে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।

নোভা

আরো পড়ুন  

×