ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলু নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা

শাহাজাদ ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২৩ মে ২০২৫

আলু নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা

ছবি: জনকন্ঠ

সংরক্ষণ করতে না পারায় কৃষকের উৎপাদিত পচন ধরা আলু বস্তায় করে পুকুরে-ডোবায় পাকা সড়কের দুই পাশে ফেলে দিচ্ছেন আলু চাষিরা। লোকসানের কারণে ঋণের পাল্লা ভারী হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। অবস্থায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। উৎপাদনের শুরুর দিকে কৃষকরা কিছু আলু বিক্রি করতে পারলেও হিমাগারে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সংরক্ষণ নিয়ে পরেন বিপাকে কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের ঢোলারহাট, রুহিয়া আঁকচা রাজাগাঁও বেশকয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রান্তিক কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে বাড়ি কিংবা আশপাশে সেড নির্মাণ করে সংরক্ষণ করেন আলু। তবে দুই মাস পার না হতেই পচন ধরে সেই আলুতে। অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পরেন কৃষক। আর কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা আলু সংরক্ষণের অভাবে দাম না পেলেও নষ্ট হয়নি আলু।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকাও মিলছে না। আলু রাখার জায়গা না পেয়ে বাড়ির পাশে সেড তৈরি করে আলু সংরক্ষণের চেষ্টা করলেও তা পচে যাচ্ছে। এখন পচা আলু ফেলে দেওয়ার জায়গাও পাচ্ছেন না তারা। যে যেভাবে পারছেন আলু ফেলে দিচ্ছেন। এতে দুর্গন্ধে চলাফেরাও কঠিন হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই উপায় না পেয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে সাড়ে লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আর জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ১৭টি। এসব হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখ মেট্রিক টন। আরও জানা গেছে, বছর আলুর কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। সেই আলু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। তারা এখন যে দামে আলু বিক্রি করছেন, তাতে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। কেউ কেউ অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পেরেছেন। কিন্তু প্রান্তিক চাষিরা তা পারেননি। ফলে আলু নিয়ে তাদের বিপদের শেষ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক সময় কৃষকের উৎপাদিত আলু বিদেশে পাঠানো হলেও এখন দেশের আলু দেশেই পচে যাচ্ছে। শুধু সংরক্ষণের অভাবে। সে কারণে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ময়লার ভাগাড়ে কিংবা যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছেন।

প্রান্তিক চাষিরা বস্তায় ভরে বাসায় বাসায় আলু মজুত করে রেখেছিলেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে আমবাগান বাঁশঝাড়ের ভেতরে আলু স্তূপ করে রেখেছেন। যারা বস্তায় ভরে রেখেছেন তাদের আলু অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সব আলু ঢেলে বাছাই করে ভালোগুলো সাড়ে ১৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। কিছুটা নষ্ট আলু টাকা কেজিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নষ্টগুলো পুরোটাই ফেলে দিতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষ গরুকে খাওয়ানোর জন্য আলু কুড়িয়ে নিচ্ছেন।

আলু ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম, আবু রায়হানসহ অনেক ব্যবসায়ী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে বা সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিতে ভূমিকা না রাখার কারণেই এমন অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। তবে আগামীতে এমন পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, আলু নষ্ট বা পচে গেছে, এমন খবর জানা নেই। তবে আলু সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানান তিনি।

মুমু

আরো পড়ুন  

×