ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০

হারানোর দিনে আবেগঘন ফিরে আসা

শতরূপে সহস্র ব্যঞ্জনায় বঙ্গবন্ধু

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১৫ আগস্ট ২০২২

শতরূপে সহস্র ব্যঞ্জনায় বঙ্গবন্ধু

মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত আলোকচিত্র

তোমার ছায়া দীর্ঘ হতে-হতে/মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে...আদরে স্নেহে সোনার বাংলাকে জড়িয়ে রেখেছেন জাতির পিতাসোমবার এ সত্য আরও বেশি উপলব্ধি করা গেছেএদিন ছিল বেদনাবিধুর ১৫ আগস্টতবে দিবসটি মুজিবের মৃত্যুদিবস হিসেবে যতটা পালন করা হয়, তারও বেশি গণ্য করা হয় নেতার প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে

এবারও মৃত্যুদিনে জীবিতদের চেয়ে উজ্জ্বল মনে হয়েছে বাঙালীর নেতাকেহারানোর দিনে সোমবার বরং ফিরে এসেছিলেন তিনিসারাদেশের মতো রাজধানীতেও এদিন বহুবিধ আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হয়শ্রদ্ধা জানানো হয়শতরূপে, সহস্র ব্যঞ্জনায় তুলে ধরা হয় মহান নেতাকে

আগের দিন ১৪ আগস্ট থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচী পালন শুরু হয়ে যায়রবিবার সন্ধ্যায় আলোর মিছিল বের করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেশকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর তারা এ কর্মসূচী পালন করে আসছে১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের ট্যাঙ্ক মানিক মিয়া এভিনিউ ধরে ধানম-ির ৩২ নম্বরের দিকে গিয়েছিল

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বিপথগামী সেনারা সেদিন অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল গোটা জাতিকেএকই পথ ধরে আলোর মিছিল করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাজাতির পিতার ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে তারা ৪৭টি মশাল বহন করেনমিছিলটি ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়অন্ধকারের ইতিহাস পেছনে ফেলে আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ে মিছিলটি বের করা হয় বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন

সোমবার ঢাকার প্রতি প্রান্ত থেকে উচ্চারিত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের নামদিনের শুরুতে কৃতজ্ঞ বাঙালী সমবেত হয়েছিল ধানম-ি ৩২ নম্বরেকী এক জাদুমন্ত্র টেনে নিয়ে গিয়েছিল সবাইকেএদিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির সমানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সরব উপস্থিতিপ্রায় সকলেই শোকের কালো রঙে সেজে এসেছিলেনধীর পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগুচ্ছিলেন তারাছলছল চোখে তাকাচ্ছিলেন ঐতিহাসিক ভবনটির দিকে

শূন্য খোলা বারান্দাটি দেখা যায়সবুজ পাতা আর সুগন্ধী ফুলেরা এখন এটিকে ঘিরে রেখেছেভালবাসায় জড়িয়ে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকেদেখতে দেখতে কখনও ভেতরটা গুমড়ে কেঁদে ওঠেকখনও হেসে ওঠে মনএই ভেবে হেসে ওঠে যে, মুজিবের নামে ঠিক ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশমুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ স্বরূপে ফিরেছেহাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর প্রতিকৃতির সামনে এখন দীর্ঘ লাইনসেই লাইলে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে ফুল দেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ

এদিন শিল্পের প্রায় সব মাধ্যমে মহান নেতার বন্দনা করা হয়এদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের খোলা জায়গায় আয়োজন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীরসাদা কালো ছবিতে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন ও সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। 

বাংলা একাডেমিতে এদিন বাংলাদেশের জাতীয় পুরাণ নির্মাণে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর অবদানশীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস এ্যান্ড সিভিলাইজেশনসের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক জেরেমি কদ্রন

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় পুরাণ নির্মাণে বাংলাদেশের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকা অসামান্যশেখ মুজিবুর রহমান সঙ্গতই উপলব্ধি করেছিলেন- জাতীয় পুরাণ নির্মাণে ঐতিহ্য ও সংগ্রামের কোন বিকল্প নেইতাঁর আত্মজীবনীতে তিনি নিজ বংশ এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সুদীর্ঘ পরম্পরা সন্ধান করেছেন এবং তার ওপর ভিত্তি করেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তির মহাপুরাণ নির্মাণ করেছেন

সন্ধ্যায় আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রআবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সভাপতিত্বে এতে মূল বক্তব্য রাখেন কবি তারিক সুজাতআলোচনা করেন আরিফ খানস্বাগত বক্তব্য রাখেন শামীম আল মামুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছিল নানা আয়োজননটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা কবিতা ও গানের ভাষায় জাতির পিতাকে স্মরণ করা হয়এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার প্যাট্রিক ড্যানিয়েল গ্যাফনিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।  

এদিকে আগস্টের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমিশাহবাগে অবস্থিত জাদুঘরে চলছে মুজিবের স্মৃতি নিদর্শনের প্রদর্শনীনলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে মানপত্র চিঠি আলোকচিত্রে মূর্ত হয়েছেন মুজিবশিল্পকলা একাডেমিতে গান কবিতা নৃত্যায়োজনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে

সব মিলিয়ে শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু আরও উজ্জ্বল হয়ে সামনে এসেছেনমুজিবকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছেধ্বংস করা যায়নি১৫ আগস্ট দিনভর এই বার্তাই দিয়েছে বাঙালী