ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কয়েকদিনের মধ্যে উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নাম পরিবর্তন হবে না

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২০ মে ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নাম পরিবর্তন হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা সেতুই থাকবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা বৈঠকে নিশ্চিত করে দিয়েছেন। আগামী জুনেইে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। তবে ঠিক কবে হবে তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে ঘোষণা দেবেন। পাশাপাশি দ্রব্যের অতিরিক্ত মূল্য ইস্যুতে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের জন্য এ ঋণ দেবে তারা। এছাড়া সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোথাও হাট-বাজার স্থাপন করা যাবে না- এমন বিধান রেখে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন-২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। পদ্মা সেতু নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আগামী পাঁচ-ছয়দিনের মধ্যে বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন। পদ্মা সেতু জুন মাসের শেষে উদ্বোধন হচ্ছে, এটা তো প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন। আমরাও প্রস্তুত আছি। আশা করি, জুনের শেষ সপ্তাহের আগেই ব্রিজ প্রস্তুত হয়ে যাবে। উদ্বোধনের তারিখটা এখনও নির্ধারিত হয়নি। জুনের শেষদিকের কোন একদিন এটি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে সেদিন উদ্বোধন করা হবে। অনেক জিনিস দেখতে হয়, সেগুলো দেখে আমরা আশা করি শেষ সপ্তাহের আগেই সেতু প্রস্তুত করে দিতে পারব। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পদ্মা সেতুর নাম কি হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑপদ্মা সেতুর নাম ‘পদ্মা সেতু’ই হবে। প্রধানমন্ত্রী হয়ত আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে যে কোন সময় এ বিষয়ে জাতির কাছে সব কিছু পরিষ্কার করবেন। পদ্মা সেতুর টোল অনেক বেশি, এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যখনই যেখানে সেতু নির্মাণ করা হয় সেখানে ফেরির ১ দশমিক ৫ শতাংশের টোল ফেরিতে ১০০ টাকা হলে ব্রিজে ১৫০ টাকা করে ধরা হয়। সেটা ধরেই করা হয়েছে। অনেকে পদ্মা সেতুকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করে। বঙ্গবন্ধু সেতু হলো ৫ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতু হলো ৯ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। প্রায় দ্বিগুণ। পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হারে সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সুতরাং সেতু কর্তৃপক্ষকে ওই জায়গা থেকে টাকা উপার্জন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের স্থাপনার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় পয়সা না দিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেমন ছিল যে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে। ওই পাড়ের যেসব কাজকর্ম এবং যেগুলো আছে সেগুলো সম্ভাব্যতা যাচাইতে আসেনি। মোংলা পোর্ট যে এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে- এগুলো কিন্তু আসেনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এটা ২-এর কাছাকাছি চলে যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে। দ্রব্যের অতিরিক্ত মূল্য ইস্যুতে অর্থ-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ ॥ দ্রব্যের অতিরিক্ত মূল্য ইস্যুতে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিসভা বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালকে কতগুলো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য। বিশেষ করে এই যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বা সরবরাহ কমে যাচ্ছে, এই জিনিসগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। কোন্ জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করলে ভাল হবে বা কোথায় ছাড় দিলে করলে ভাল হবে। এগুলো দু’-তিন দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তুলে ধরতে হবে। ডলারের যে সঙ্কট হচ্ছে, এটা কীভাবে সুলভ করা যায় তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসে দু’-তিনদিনের মধ্যে প্রেসের সামনে বসার জন্য। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তাদের বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করণীয়। যেমন মনে করেনÑ আপনি একটি পরামর্শ দিলেন ফল আনার মধ্যে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন, যাতে ফল বেশি না আসে। এখন বৈশাখ মাস। এখন তো আমাদের আম, জাম কাঁঠাল পর্যাপ্ত থাকবে। এ রকম একটি পরামর্শ আপনি দিলেন, এটা বিবেচনা করে যৌক্তিক কিনা, সেটা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া। তিনি বলেন, ৮ বা ৯ হাজার কোটি টাকার ফল আসে বছরে। এখন ট্যাক্স যদি সাময়িকভাবে বাড়ানো হয় বা অন্য যে ফ্যান্সি আইটেমগুলো আছে সেগুলোতে ট্যাক্স বাড়ান, এ বিষয়গুলো আলোচনা করে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনাদের কাছেও আমাদের একটি আবেদন যে গঠনমূলক জিনিসগুলো আলোচনা করতে হবে। কোভিড মোকাবেলায় সাফল্য : ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ ॥ সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের জন্য এ ঋণ দেবে তারা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিষয়ে একটি রিভিউ হয়েছে। এখানে খুবই ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। আমাদের ব্যাপারে তারা খুবই খুশি। এ জন্য তারা বাংলাদেশকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। তারা বাংলাদেশের কোভিড কার্যক্রমের জন্য খুবই সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য। তিনি বলেন, আগামী বছর আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিশ্বব্যাংক এই টাকা ঋণ হিসেবে দেবে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন বা অন্যান্য সহায়তা সরকার দিয়েছে। এর বাইরেও প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার টিকা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিতরণ করেছি। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীকে যে ভ্যাক্সিনেটেড করা গেছে এটা বিশ্বব্যাপী খুব প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা তারা সারা পৃথিবীতে প্রচার করতে চায়। যেহেতু আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা খুবই ভাল। ইপিআই কার্যক্রম, এটা আপনারা জানেন। জাপানেও একটি বড় পত্রিকায় এটা নিয়ে বড় করে রিপোর্টিং হয়েছে। তারাও স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের মডেলটা নিয়ে অন্য জায়গাগুলোতে ব্যবহার করা যায়। অনুমোদন ছাড়া হাট-বাজার স্থাপন করা যাবে না ॥ সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোথাও হাট-বাজার স্থাপন করা যাবে না- এমন বিধান রেখে ‘হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন-২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ব্যক্তি মালিকানায় কোথাও হাট-বাজার স্থাপন করা হলে তা সরকার অধিগ্রহণ করবে। তিনি আরও জানান, খসড়া আইন অনুযায়ী কেউ সরকারী খাস জমিতে হাট-বাজার স্থাপন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
×