ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা

প্রকল্প কমিয়ে অর্থায়ন বাড়িয়ে উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৮ মে ২০২২

প্রকল্প কমিয়ে অর্থায়ন বাড়িয়ে উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে মেটানো হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯ কোটি টাকা। বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকা মেটানো হবে বৈদেশিক উৎস বা ঋণ হতে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেশনের ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। যার মধ্যে জিওবি অর্থায়ন ৭ হাজার ১০৪ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় মোট প্রকল্প ১ হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৪৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ৮৫টি প্রকল্প। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষ ও সচিবালয়স্থ মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এডিপি অনুমোদন হয়েছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই এই অনুমোদন। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরেও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রসার, কোভিড-১৯ মোকাবেলা, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে এডিপি প্রণয়ন হয়েছে। এডিপির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রসার, কোভিড-১৯ মোকাবেলা, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা খাতে সেবার মানোন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মোট এডিপির মধ্যে সরকারী কোষাগার থেকে ব্যয় হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণ থাকবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেশন তাদের নিজেদের অংশ থেকে ব্যয় করবে হাজার ৯৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ছোট ছোট প্রকল্প না নিয়ে এখন থেকে সমন্বিত প্রকল্প নেয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এজন্য এডিপিতে প্রকল্পের প্রকৃত সংখ্যা কমছে। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প থাকবে ১ হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৪৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প ৮৫টি। এ বছর এডিপিতে নতুন প্রকল্প যোগ হয়েছে ৪৪টি। আগামী অর্থবছরে প্রকল্প সম্প্রসারিত হয়েছে ৮০৯টি। এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। নতুন এডিপিতে এ খাতে যাচ্ছে ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বা ২৮.৭৩ শতাংশ। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বা ১৬ শতাংশ। শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ ব্যয় করবে সরকার। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্তে ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার খাতে ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ, কৃষিতে ১০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে ৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ, শিল্প খাতে ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বা সোয়া ২ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা বা পৌনে ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ (১০টি) ॥ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ৪১২, শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮১ কোটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৪ হাজার ৪৯৭ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ১৯ হাজার ২৭৮, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৬৫, কৃষি খাতে ১০ হাজার ১৪৪, পরিবেশ, জলবায়ু, পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৯৫, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৪০৭ এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি প্রকল্প ॥ প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে, ৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীতে (পিইডিপি-৪), মাতারবাড়িতে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) প্রকল্পে প্রায় ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা, ৫ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা পদ্মা সেতুর রেল সংযোগে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ডব্লিউবি-জিওবি) প্রকল্পে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮৫১ কোটি, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৭০৩ কেটি, এক্সপানশন এ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৯ কোটি এবং ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) প্রকল্পে ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় পরিকল্পনামন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×