ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহিদুল ইসলাম

পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহারিক নীতিশিক্ষা

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৪ মে ২০২২

পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহারিক নীতিশিক্ষা

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব একথা মানুষের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা দ্বারা প্রমাণিত। আবার ষড়রিপুর তাড়নায় নানা অকল্যাণমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় অনেককে। সৃষ্ট জগত সব জায়গায় সমান নয়। কোথাও পাহাড় ও কোথাও সমতল, কোথাও উর্বর, কোথাও মরুভূমি। মানুষের ভেতরও রয়েছে ধনী-গরিব, ভাল-মন্দ ব্যবধান। আজকাল মানবতা লঙ্ঘনকারীদের মুখেও মানবতার সুর শোনা যায়। যারা বিলাসিতায় দিন কাটাচ্ছেন তারা প্রকৃত সত্য ও জীবনবোধ থেকে অনেক দূরে। জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে আমাদের পরোপকারিতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কেউ বিপদে পড়লে তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের অসৎ কার্মকা-ের ফলে সুন্দর পৃথিবী ধ্বংস এবং অশান্তির দিকে ধাবিত হয়, সমাজের শান্তি বিনষ্ট হয়। মানবসত্তার দুটি দিক- একটি দৈহিক এবং অন্যটি মানবিক। এই দুটির সংমিশ্রণে মানুষ গঠিত। দৈহিক বিষয়টির পরিপুষ্টির জন্য দরকার আহার, পানাহার। মানবিক দিক দিয়ে উন্নতির জন্য চাই নৈতিক শিক্ষা। মানুষ যদি মানবিক বিষয়গুলোর উন্নয়ন না ঘটায় তাহলে তার যাত্রাপথ হয় অন্ধকার, যা থেকে নিষ্কৃতির উপায় বেশ কঠিন ও কষ্টসাধ্য। মানুষের বিপথগামিতা নিয়ে চিন্তাবিদদের ভাবনার শেষ নেই। চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, কলোবাজারি, লুটপাট, সুদ, ঘুষ, পতিতাবৃত্তি, মদ, জুয়া, মিথ্যা, ধোঁকাবাজি প্রভৃতি মানুষকে বিভ্রান্তির পথে পরিচালিত করে। যদিও মানুষকে এসব অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। নীতিশিক্ষা দ্বারা একজন মানুষ নিজের চারিত্রিক উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। আবার শাস্তির ভয়েও কেউ অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন। তবে নীতিবিদ্যার শিক্ষা গ্রহণ করাই উত্তম। মানুষের ভিতর নৈতিক জ্ঞান থাকলে সে অন্যায় করতে পারে না। ট্রাফিক আইন, মেডিক্যাল এথিকস, ব্যাংকিং এথিকস, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা এগুলো পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একজন মানুষ যখন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠেন তখন তার দ্বারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র আলোকিত হবে এতে সন্দেহ নেই। এই আলোকিত মানুষ কিভাবে তৈরি হবে এই শিক্ষাটা আজকের বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আলোকিত জাতি গঠিত হবে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আজ মানুষ মহাকাশে পৌঁছেছে, সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করেছে। এমনকি মহাকাশে স্টেশন তৈরি করছে। কিন্তু আপন নিবাসে শান্তিতে বসবাস করতে শিখেনি। বর্তমান সভ্যতা মানুষের কাছে গতি এবং সহিংসতা নিয়ে এসেছে। বোতামে চাপ দেয়ার মাধ্যমে এক অঞ্চলের মানুষ আরেক অঞ্চলের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে। এই গতি এবং সহিংসতার সঙ্গে মানুষের এক সময় পরিচয় ছিল না। যুদ্ধ থেকে মানবজাতিকে কিভাবে মুক্ত করা যায় সেই দিকটিও ভাবা দরকার। শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের মননশীল বিষয়গুলো উন্ননের বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। অতি যান্ত্রিকতার মধ্যে আমাদের মননশীল, সৌন্দর্যময়, মানবতা মূল্যবোধ তুলনামূলক কম পাওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার দ্বার আরও উন্মুক্ত করতে হবে। একজন মানুষ নীতিজ্ঞানসম্পন্ন কিন্তু তার বিমান চালনার জ্ঞান নেই। তাহলে তিনি বিমান চালাতে পারবেন না। আবার একজনের বিমান চালনার জ্ঞান আছে অথচ নীতিজ্ঞান নেই। তাহলেও তার জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে। কাজেই মানুষকে জগত এবং জীবন সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। হতে হবে সৎ, দেশপ্রেমিক, নীতিজ্ঞানসম্পন্ন। মানুষের মাঝে মানবিক গুণাবলীর যদি কোন উন্নয়ন না ঘটে তাহলে সুন্দর সভ্যতা গড়ে তোলা অসম্ভব। মানবজাতির আলোকিত ভবিষ্যত নিশ্চিতকরণে নৈতিক শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত ও সম্প্রসারিত করতে হবে। তবেই মানবতা মুক্তি পাবে। মানুষ খুঁজে পাবে শান্তির ঠিকানা। লেখক : শিক্ষক, সরকারী ইস্পাহানী ডিগ্রী কলেজ, কেরানীগঞ্জ
×