ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী

অর্থ পাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন প্রয়োজন

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২২

অর্থ পাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশে অর্থ পাচার রোধে দক্ষিণ কোরিয়াকে উদাহরণ টেনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশটি থেকে একসময় অনেক অর্থ পাচার হতো। কঠোর আইন ও শাস্তির কারণে তা বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেও তাই করা উচিত। বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টাকা পাচার প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। অর্থ পাচার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কঠোর হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মামুদ চৌধুরী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মোঃ জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। অনুষ্ঠানে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামসহ অনুষ্ঠানে ২০ কাস্টমস কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের সার্টিফিকেট অব মেরিট এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ওভার ইনভয়েসিং (বেশি দাম দেখিয়ে পণ্য আমদানি) ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (বেশি দামের পণ্যকে কম দাম দেখিয়ে রফতানি) মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীসহ সরকারী কর্মকর্তারা কর ফাঁকি দিয়ে এ টাকা পাচার করছেন। ‘এই পাচার প্রতিরোধ করতে হলে কাস্টমস বিভাগের বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে। কিভাবে টাকা পাচার কমানো যায়, সে বিষয়ে কাস্টমসকে কাজ করতে হবে।’ এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ‘কোরিয়াতে একসময় বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হতো। এই পাচার রোধে তারা কঠোর আইন করেছে। যারা পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। যে কারণে ওই দেশে টাকা পাচার কমেছে। ‘তাদের মতো বাংলাদেশকেও অর্থ পাচার বন্ধে আইন করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনক্রমেই বিদেশে টাকা পাচার না করতে পারেন সে জন্য কাস্টমসকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং টেক্স জিডিপির অনুপাত বাড়াতেও সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে আমাদের আয় বাড়াতেই হবে। এ জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।’ দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা। এসডিজি গোল বাস্তবায়নে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়েছি।’ আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। এটাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে কাস্টমস দিবসের আজকের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সবক্ষেত্রে এটি যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারব। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার অনেকগুলোই থাকবে না। সে সময় উন্নত দেশের সঙ্গে কাস্টমসের সিস্টেমগুলো কী হবে, কিভাবে আমাদের সুবিধাগুলো নেব, সে সময় কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কর জিডিট অনুপাত অনেক কম। যেটা ১০ শতাংশেও উত্তীর্ণ হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল কিংবা ভুটানের চেয়ে অনেক কম। আমাদের দুই জিনিসের প্রতি নজর দিতে হবে। একটি মানিলন্ডারিং ও কর জিডিপি অনুপাত। এই দুটি বিষয়ে কিভাবে দৃষ্টান্তমূলকভাবে উত্তরণ পেতে পারি, সে বিষয়ে লক্ষ্য নিয়ে আপনারা কাজ করবেন। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা পর্যন্ত করের আওতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল তা এখন কেটে গেছে। কাস্টমস এখন একটা গর্বের জায়গা।’ বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে শিল্পায়নের পাশাপাশি রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ দরকার বলে জানালেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া। এ জন্য মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে ৫ হাজার ৫০০ ডলার। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শিল্পায়নের কোন বিকল্প নাই। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াতে হলে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। এ জন্য এনবিআর ও প্রাইভেট সেক্টরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ শুধু রাজস্ব আদায়ের ভূমিকাই না, দেশের স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় এনবিআর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি) মাসুদ সাদিক। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশে একযোগে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে।
×