নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ গত বছরের ন্যায় এবারেও শীত মৌসুমে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বোচাপুুকুর এলাকার সুগার মিলের খেজুর বাগান লিজ নিয়ে রাজশাহীর কয়েকজন গাছি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী শুরু করছিল। এবারও খেজুরের রস ও রস থেকে তৈরীকৃত গুড় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গুড় চলে যাচ্ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কিছু অসাধু লোকজন হুমকি-ধুমকি ও গাছিদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করায় গাছিরা গুড় তৈরি বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি চলে গেছে।
রাজশাহী থেকে আগত গাছি ও গুড় তৈরীর কারিগর সুজন আলী মঠোফেনে জানান, ‘কয়েকজন লোক প্রায় প্রতিরাতে তাদের কাছে বিনামূল্যে খেজুরের রস খেতে চাইছিল। তাদের রস খেতে না দিলে তারা নানা হুমকি প্রদান করে এবং তারা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাদা দাবি করছিল। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা বাধ্য হয়ে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীর কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।
চাঁদা দাবি করা ও হুমকি প্রদানকারিদের পরিচয় জানতে চাইলে সুজন আলী জানান, তারা রাতের আঁধারে মুখ ডেকে আসতো, নাম পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাদের পরিচয় দিত না। তাই তাদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
এবিষয়ে সুজন আলী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কারও কাছে কোন অভিযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের বাড়ি অনেক দুরে। রাতের আঁধারে তারা যদি সেখানে আমাদের মেরে ফেলতো কে আসতো আমাদের বাঁচাতে ? তাই প্রাণের ভয়ে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাতে সাহস পাচ্ছি না।,
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাঘ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতাম কিন্তু হুমকি ও চাঁদা দাবি করার কারণে গত সপ্তাহে আমরা বাড়ি চলে এসেছি।
এই বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, এটি খুব দুঃখজনক বিষয়। এতে কিছু অসাধু লোকের জন্য আমাদের জেলার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই বিষয়গুলো এড়াতে প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।
বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক উল্লেখ্য করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামন বলেন, গাছিরা বিষয়টি যদি আমাকে অবগত করতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। ভয় পেয়ে গাছিরা গুড় তৈরির কাজ বন্ধ না করে তাদের উচিত ছিল প্রশাসনকে অবগত করা। আগামিতে এধরণের কোন কিছু হলে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করার দৃশ্য দেখতে, রস খেতে ও গুড় ক্রয় করতে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন ঠাকুরগাঁওয়ে শতশত দশনার্থীরা ভিড় করছিল। আগত দর্শনার্থীরা এখানকার খেজুরের রস ও গুড় খেয়ে স্বাদ ও তৃপ্তি পেতো। এছাড়াও এখানকার পরিবেশ দেখে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন তারা। এতে সদর উপজেলার বোচাপুুকুর এলাকার সুগার মিলের এই খেজুর বাগানটি মৌসুমি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছিল।