ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৭ জানুয়ারি ২০২২

ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর ॥ শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। এছাড়া রুটিন মেরামতের জন্য ৮৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার টাকা করে এবং ১শ’ ৫১ টি বিদ্যালয়ে স্লীপ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব বরাদ্দের বিল ভাউচার পাশ করাতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া নির্ধারিত হারে টাকা দাবি করেন। তিনি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি স্কুল থেকে ৫ হাজার টাকা করে, ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি স্কুল থেকে ৫শ’ টাকা করে, স্লীপের বরাদ্দ থেকে প্রতিটি স্কুল থেকে ৮শ’ টাকা এবং ওয়াশ-ব্লক থেকে ২শ’ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করেন। সদ্য বদলী হওয়া হিসাব সহকারী লিখন মিয়ার কাছে নির্ধারিত হারে টাকা দিয়ে প্রতিটি স্কুলের বিল ভাউচার পাশ করাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মাঝে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার রাজিয়া সুলতানা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তার অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলতে শিক্ষকরা সাহস পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের এসব কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে কয়েকজন শিক্ষক লিখিত একটি অভিযোগ তৈরি করেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চাপে তা তাঁর কার্যালয়ে উপস্থাপন করতে পারছে না বলেও দাবি কতিপয় শিক্ষকের। এছাড়াও ডিপিইও’র বরাত দিয়ে অভিযোগ না করতে চাপ প্রয়োগ করছে কয়েকজন শিক্ষক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাকুরী করি। ভালমন্দ বলার অধিকার আমাদের নেই। টাকা দিয়েও বলতে সাহস পাই না। চাকুরীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভয় দেখায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে সত্য গোপন করতে হয়। টাকা দিয়েও অস্বীকার করতে হয়। আপনাদের কাছে বলে আর কী লাভ হবে। তারা আরও বলেন, নির্ধারিত টাকা দিয়েই বিল পাশ করাতে হয়েছে। লিখনের কাছে আগে টাকা জমা দিয়ে বিল ভাউচার উপস্থাপন করতে হয়েছে। উপজেলার সকল প্রধান শিক্ষকরা টাকা দিয়েছে। আমাদের টাকা না দেয়ার উপায় আছে ? সম্প্রতি বদলী হওয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব সহকারী লিখন মিয়া বর্তমানে গোসাইরহাট উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে তার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন আগের বিষয়। এখন অভিযোগ করার কি আছে? সবাইতো একমত হয়েই টাকা উত্তোলন করেছে। আমার কোন দোষ নেই। আমার কাছে শুধু টাকা জমা দিয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কোন টাকা পায়সা নেই নাই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিল শিক্ষকরা। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোন বিষয়ে শিক্ষাকরা অভিযোগ করতে পারেন। এতে কোন বাধা নেই।
×