
জামালপুর জেলা শহর থেকে প্রতিটি উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে একটি মাত্র ভরসা সিএনজি চালিত অটোরিকশা। তবে ছোট এ যানটি আজ আর কারো জন্যও আরামদায়ক বা নিরাপদ নয়। বরং প্রতিদিনের যাত্রায় এটি হয়ে উঠেছে এক অস্বস্তি আর আতঙ্কের নাম। তাই আজ এক কণ্ঠে মানুষ বলছে সিএনজি নয়, চাই মিনি বাস ।
এই দাবিটি এখন আর শুধু কিছু যাত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ নয়। এটি রূপ নিয়েছে গণমানুষের প্রাণের দাবিতে। জেলার সাতটি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী রৌমারী ও রাজীবপুর এলাকার হাজারো সাধারণ যাত্রীরা চান প্রতিদিনের জীবনের যন্ত্রণার অবসান হোক, মিনি বাসের মতো একটি নিরাপদ, শৃঙ্খলিত ও সম্মানজনক পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হোক।
কেন সিএনজি এখন অসহনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ? অতিরিক্ত যাত্রী তোলা, ছোট একটি সিএনজিতে ৫ জন যাত্রী + চালক মিলিয়ে ৬ জন তোলা হয়, যা সম্পূর্ণ অস্বস্তিকর, অনিরাপদ এবং অমানবিক । বিশেষ করে সামনের সিটে চালকের সঙ্গে দুজন যাত্রী বসানো হয় এটি শুধু অস্বস্তিকর নয়, ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ নষ্ট করে ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়।
গরমে দুঃসহ যাত্রা, চালকের ঘামে যাত্রীর গা ভিজে যাওয়া, সিটে হেলতে না পারা, গাদাগাদি করে বসা সব মিলিয়ে গ্রীষ্মকালে এই যাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। একেকটা সিএনজি যেন গরমে ভাপা অচল কৌটো।বেপরোয়া ও অস্বাভাবিক চালনা, স্টেশনে সিরিয়াল পেতে চালকরা ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান, হুটহাট ফাঁক পেলেই ঢুকে যান প্রতিদিনের এসব দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত সবাই। নিষেধ করলেও চালকরা কথা শোনেন না এতে ঘটছে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামো, সিএনজি নামক খাঁচাটির চারপাশ সিকল দিয়ে আটকানো থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীরা অনেক সময় সেই খাঁচা ভেঙে বের হতে পারেন না। অতীতে এমন বহু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ইতিহাস রয়েছে।
কেন মিনি বাস চালু করা সময়ের দাবি ? নির্ধারিত সময়ের পরিবহণ যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে এসে টিকিট কেটে নির্দিষ্ট সময়েই যাত্রা শুরু করতে পারবেন এতে সময় নষ্ট হবে না। ভাড়া হবে সাশ্রয়ী ৩০-৫০ টাকার মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় যাওয়া যাবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধাজনক ও ন্যায্য সেই সাথে নিরাপদ ও সম্মানজনক যাত্রা। গাদাগাদি নয়, খোলা জানালার পাশে বসে যাত্রা এমন অভিজ্ঞতা বহুদিন ধরেই মিস করছেন যাত্রীরা। পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থাসহ প্রশিক্ষিত চালকের মাধ্যমে চলবে বাস, থাকবে সুপারভাইজার, থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রৌমারী-রাজীবপুরের ভোগান্তিও যুক্ত হয়েছে আন্দোলনে, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে বকশীগঞ্জ হয়ে জামালপুরে যাতায়াত করেন বহু মানুষ। কিন্তু এত দীর্ঘপথেও সিএনজি-ই একমাত্র ভরসা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝাঁকুনি, গাদাগাদি এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে যাত্রা করতে বাধ্য হন এসব মানুষ। এই যাত্রীদেরও একটাই দাবি মিনি বাস চাই, এখনই চাই ।
যাত্রীদের আহ্বান ও গণচেতনার বিস্তার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই দাবির পোস্টার, স্ট্যাটাস, ভিডিও, মতামত। খাঁচায় নয়, বাসে চাই স্বাধীন যাত্রা, এমন স্লোগানে সোচ্চার হয়ে উঠছেন সাধারণ মানুষ। তারা চাইছেন, সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৩ জন যাত্রী তোলার নিয়ম চালু হোক, চালকের পাশে যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ হোক, চালকের বেপরোয়া গতি রোধে নজরদারি হোক, প্রতিটি উপজেলায় বাসস্ট্যান্ড স্থাপন করে সময়সূচিভিত্তিক বাস চালু হোক।
সমাধানের জন্য এখন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দরকার, এই মুহূর্তে জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা জরুরি। ভাড়া নির্ধারণ, রুট অনুমোদন, বাস অপারেটর নির্বাচন এই কার্যক্রম দ্রুত শুরু না হলে গণদাবি উপেক্ষিত থাকবে, এবং প্রতিদিন ঝুঁকিতে থাকবে হাজারো যাত্রীর জীবন।
এটা শুধু যানবাহনের প্রশ্ন নয়, এটা জীবনের প্রশ্ন, এই আন্দোলন শুধু রাস্তার নয়, এটা জনজীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন। গরমে, ভিড়ে, ঝুঁকিতে আর নয় মিনি বাস হোক সকলের ন্যায্য অধিকারের প্রতীক।
জামালপুর এখন জেগে উঠেছে। এখন আর কেউ চুপ থাকবে না। একটাই দাবি মিনি বাস চাই, জীবন বাঁচাতে চাই।
Mily