ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিলে আমার সই নেই, অধিকাংশই অপপ্রচার : লিয়াকত আলী লাকী

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

বিলে আমার সই নেই, অধিকাংশই অপপ্রচার : লিয়াকত আলী লাকী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ‘কোনো বিলে আমার সই নেই। অভিযোগ যা এসেছে, তার অধিকাংশই অপপ্রচার।’ দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমনটা বলেছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটের দিকে লিয়াকত আলী লাকী দুদক কার্যালয়ে হাজির হন। এর কিছু সময় পরেই দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে গঠিত টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, যা শেষ হয় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লাকি সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ যা এসেছে, তার অধিকাংশই অপপ্রচার। যেসব বিলের কথা বলা হয়েছে, কোনোটিতেই আমার সই নেই। আপনারা বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতা করবেন বলে আশা করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা ২৬ কোটি টাকা উত্তোলনের কথা বলছেন, সেটা হবে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ১৩ কোটি টাকা বেতন-বোনাস, পৌরকর ও বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে দেড় কোটির মতো ভ্যাট-ট্যাক্সে জমা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি তাকে তলবি নোটিশ দেয় দুদক। এর আগে ৫ জানুয়ারি অভিযোগ অনুসন্ধানে শিল্পকলা একাডেমির দুই অর্থবছরের বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তলব করে চিঠি দেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সেসব নথিপত্র ইতোমধ্যে দুদকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। যেসব রেকর্ডপত্র তলব করা হয় দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্পকলা একাডেমির ঢাকা কার্যালয়ে বরাদ্দ করা বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে অব্যয়িত ৩৫ কোটি টাকা ২০২১ সালের ৩০ জুনে ব্যয়করণ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করা হয়। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আয়োজন-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ব্যয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাউচার-ক্যাশ বই এবং শিল্পকলা একাডেমি নামীয় সোনালী ব্যাংক (সেগুনবাগিচা শাখা) অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের কপি। ২ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। প্রায় এক যুগ ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা তুলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চুক্তিভিত্তিক এক কর্মকর্তাকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে এ অর্থ উত্তোলন করে নেন লিয়াকত আলী লাকীসহ একটি সিন্ডিকেট। দুদকে দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন শিল্পকলা একাডেমির আগের সচিব নওশাদ হোসেন বদলি হলে সেদিনই নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমকে সচিবের দায়িত্ব দেন লাকী। ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে উত্তোলন করা হয়। সরকারি বরাদ্দের অর্থ খরচ দেখাতেই এমন অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয় বলে দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এর বাইরেও লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সংগীত বিভাগের কক্ষে ব্যবহারের জন্য পর্দা, ক্রোকারিজ ও ফার্নিচার না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ, ‘ডান্স অ্যাগেইনস্ট করোনা’ কর্মসূচির আওতায় নৃত্যদলের সম্মানী, হার্ডডিস্ক কেনা, ডকুমেন্টেশন, প্রপস-কস্টিউম, প্রচার ও বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা তোলার অভিযোগ উল্লেখযোগ্য।
×