ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পর্ষদ ও প্রশাসকের টানাটানিতে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

পর্ষদ ও প্রশাসকের টানাটানিতে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কি হচ্ছে। পর্ষদ বাতিল ও নতুন প্রশাসকের টানাটানিতে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আদালতে মামলা, রিট হওয়ায় কাজ করতে পারছে না কর্মকর্তারা। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার গ্রাহক। একদিকে আদালতে নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে লেনদেন করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক। সাধারণ গ্রাহক বীমা দাবির টাকা না পেলেও পছন্দের ব্যক্তিদের দাবি পরিশোধ করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এসব চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক বসানো হয়। প্রশাসক বসানোর প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে আগের পর্ষদ। আদালত গত ৬ জানুয়ারি প্রশাসক বসানো অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ের পর ফের রিট পিটিশন দায়ের করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে ১০ জানুয়ারি আগের রায়ের ৬ দিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের স্থগিতাদেশে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কোন কাজে হস্তক্ষেপ না করার আদেন দেন প্রশাসকের ওপর। এর আগে ৬ জানুয়ারি ইস্যু করা ৯ জানুয়ারি স্বাক্ষরে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ হাজার টাকার বেশি কোন লেনদেন না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে কোন ধরনের পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, পদাবনতি, সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার, কোন দায়িত্ব প্রদান করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ১০ জানুয়ারি আদালতের স্থগিতাদেশের পরও এসব নির্দেশনা না মেনে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারি ২৫ লাখ টাকার বেশি পেমেন্ট করেছে বিভিন্ন খাতে। পুরোপুরি অবৈধ এই অর্থ লেনদেন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে ৬ জানুয়ারি প্রশাসক নিয়োগে আদালতের রায় দেয়ার পর ওই দিনই প্রতিষ্ঠানটিতে রায়ের কপি নিয়ে যান আইনজীবী। সেখানে রায়ের কপি গ্রহণ করেন তারা। ১০ জানুয়ারি স্থগিতাদেশের রায়ের পর প্রশাসক মোঃ কুদ্দুস খান আইডিআরএ’র বরাবর একটি চিঠি দেন রায়ের কপি নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সম্পর্কে। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বহিরাগতরা উগ্র আচরণ করে তাকে জোর পূর্বক তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। তার সঙ্গে অনভিপ্রেত আচরণ করা হয়। ১৩ জানুয়ারি আইডিআরএ’র নির্দেশ অমান্য করে ২৫ লাখ টাকার বেশি পেমেন্টের বিষয় জানতে ডেল্টা লাইফের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ফারহান উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আইডিআরএ’র নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান। ওই প্রত্যাহার নির্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি অফিসে আছে। এখন দেয়া সম্ভব নয়। আইডিআরএ’র কর্মকর্তার এমন কোন প্রত্যাহার আদেশ হয়নি বলে জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নিয়োগকৃত প্রশাসক মোঃ কুদ্দুস খান বলেন, অফিসিয়াল বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। পরিচালনা পর্ষদ পরিচালক জিয়াদ রহমান বলেন, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কোন এজিএম হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। ২০১২ সালে আমরা দায়িত্ব নিয়ে এজিএম করেছি। ওই সময়ে বিভিন্ন সরকারী ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ হয়নি। ফলে এজিএম করার পর সেসব কর পরিশোধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কর পরিশোধের জন্য ২০০ কোটি টাকার প্রভিশনিং করা আছে। একই সঙ্গে গত বছরের বিভিন্ন বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে অডিট রিপোর্ট হয়েছে সেটা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ বা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়নি। ইতোমধ্যে পর্ষদ বাতিল করা হয়।
×