ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইনসুলিন বনাম ডায়াবেটিস

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১১ জানুয়ারি ২০২২

ইনসুলিন বনাম ডায়াবেটিস

(ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন অনেকের ধারণা, ইনসুলিন ডায়াবেটিসের শেষ চিকিৎসা, ইনসুলিন দেয়া মানে আর আশা নেই। এটা ঠিক নয়।) ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন প্রতিবছর ১৪ নবেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। এ বছর এর সঙ্গে পালিত হচ্ছে ইনসুলিন আবিষ্কারের শত বছর। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন আবিষ্কার একটি মাইলফলক। শত বছর ধরে লাখ লাখ ডায়াবেটিসের রোগীর জীবন বাঁচাচ্ছে এই ইনসুলিন। কিন্তু ইনসুলিন নিয়ে আছে আমাদের অকারণ ভীতি। কখন ইনসুলিন প্রয়োজন সব ডায়াবেটিসের রোগীর ইনসুলিন দরকার হয় না। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় বলে তাদের সারা জীবন ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। তবে আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ রোগীই টাইপ-২ ডায়াবেটিসের। জীবনাচরণ ও মুখে খাবার ওষুধেই তাদের বড় অংশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তবে গর্ভকালীন ও স্তন্যদানকালীন, বড় কোন সার্জারির আগে-পরে, জটিল সংক্রমণ হলে (যেমন নিউমোনিয়া বা সেপটিসেমিয়া), কিডনি বা যকৃৎ অকার্যকর হয়ে গেলে, একাধিক মুখে খাবার ওষুধের সর্বোচ্চ মাত্রায়ও কাজ না হলে, রক্তের এইবিএওয়ানসির মাত্রা ১০ শতাংশের ওপর হলে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা আবশ্যক। ইনসুলিন শেষ চিকিৎসা নয় অনেকের ধারণা, ইনসুলিন ডায়াবেটিসের শেষ চিকিৎসা, ইনসুলিন দেয়া মানে আর আশা নেই। এটা ঠিক নয়। অনেকেরই বিপদ কেটে যাওয়ার পর ইনসুলিনের বদলে আবার মুখে খাওয়ার ওষুধে ফেরা যায়। ইনসুলিনে ভয় ওজন বৃদ্ধি আর হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে হঠাৎ শর্করা কমে যাওয়ার বিপদ ছাড়া ইনসুলিনের তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নতুন ধরনের আধুনিক ইনসুলিন আসার পর এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেকাংশে কমে গেছে। ইনসুলিন পেন ডিভাইস ব্যবহারে ব্যথা নেই বললেই চলে। ইনসুলিন সংরক্ষণ ও ব্যবহারবিধি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ইনসুলিন একটি প্যাকেট বা বাক্সে করে ড্রয়ার বা এমন কোন স্থানে রাখলে চলে, যেখানে রোদ বা বেশি গরম না লাগে। যে ইনসুলিন ব্যবহৃত হচ্ছে, তা রেফ্রিজারেটরে না রাখলেও চলে। তবে একসঙ্গে কয়েকটি কেনা হলে অব্যবহৃতগুলো রেফ্রিজারেটরে রাখা ভাল। ইনসুলিন ব্যবহারের সুই বা সিরিঞ্জ দু-তিনবার ব্যবহারের পর পরিবর্তন করা উচিত। বাহুর বা ঊরুর বাইরের দিকে চামড়ার নিচে কিংবা পেটে নাভির অন্তত চার আঙুল দূরে ত্বকের নিচে ইনসুলিন দেয়া হয়। সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে চামড়া একটু টেনে উঠিয়ে ঠিক ত্বকের নিচে দিতে হবে। পেন ডিভাইসে সুই এত ছোট ও সূক্ষ্ম থাকে যে তার দরকার হয় না। ইনসুলিন পুশ করার পর আরও ১০ সেকেন্ড ধরে রাখা নিয়ম, যাতে সবটুকু ভেতরে যেতে পারে। সুই বের করার পর জায়গাটা ডলা বা ম্যাসাজ করা যাবে না। আধুনিক ইনসুলিন ব্যবহার করলে খাওয়ার জন্য আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করা প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি ভুলে গেলে খাওয়ার পর বা খাওয়ার মাঝখানেও ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও পারেন। ডাঃ তানজিনা হোসেন লেখক : চিকিৎসক ও কল্পবিজ্ঞান, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম, গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
×