ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রায়পুরায় ব্ল্যাক রাইস চাষ করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো.শহীদ

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

রায়পুরায় ব্ল্যাক রাইস চাষ করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মো.শহীদ

সংবাদদাতা, রায়পুরা, নরসিংদী ॥ অল্প জমিতে পুষ্টি গুন ও চাহিদা সম্পুর্ন ব্ল্যাক রাইস (কালো রঙের চালের ধান) চাষাবাদ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন মো শহীদ উল্লাহ। তিনি নরসিংদীর রায়পুরার মির্জানগর ইউনিয়নের হাঁটুভাঙা গ্রামের সাধারণ কৃষক। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় এ জাতের বীজ ধানসহ সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হয়। এ উপজেলায় ২০২১ সালে প্রথম বারের মত মাত্র ১৫ শতক জমিতে ব্ল্যাক রাইস কালো ও সোনালী জাতের ৩৫ শতক জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। এতে তিনি সাফলতার স্বপ্ন দেখতে পান। জানা যায়,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় ও তত্বাবধানে মো শহীদ উল্লাহ ৫০ শতক জমিতে নতুন জাতের ধান চাষাবাদ করেন। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় ইতিপূর্বে চিনের সম্রাটদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে এ চাল খাওয়ার নির্দেশনায় সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ চীন, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্ল্যাক রাইস(কালো চাল) স্বাস্থ্যকর খাদ্যের দোকানগুলোতে ব্যাপক বিক্রি ও চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ কালো রঙের এই চাল কিছুদিন পূর্বে সুপারফুড হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ চালে ঔষধি গুন রয়েছে। কালো চাল নিয়ে বাংলাদেশে আরও অধিক গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। কালো চালের ভাত সাধারণ ভাতের অর্ধেক খেলে পেট ভরে যাবে। ফাইবার বেশি থাকায় তা সময় নিয়ে হজম হবে। এতে রয়েছে একাধিক পুষ্টি সমাধানে প্রোটিন,ভিটামিন,আয়রন ও সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য খুবই কার্যকরী। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। এদিকে যাদের পেটে চর্বি রয়েছে তাদেরও উপকার হবে। কালো জাতের ধানের চাষ সারা দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম। প্রতি ১০০ গ্রাম চালে প্রোটিন ৮.৮৯ গ্রাম,ফ্যাট ৩.৩৩ গ্রাম, ফাইবার ২.২ গ্রাম,কার্বোহাইড্রেট ৭৫.৫৬ গ্রাম,আয়বণ ২.৪ গ্রাম পুষ্টি গুণাগুণ পাওয়া গেছে। তা ছাড়াও গ্লকোজের জিআই ১০০ ভাগ, চিনির ৮০ভাগ,সাদা চালের ভাতের ৭২ ভাগ,গমের আটার রুটিতে ৬৫ ভাগ আর কালো চালের জিআই মাত্র ৪২ ভাগ। মো শহীদ উল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে কালো জাতের ধান ১৫ শতক ও সোনালী জাতের ধান ৩৫ শতক জমিতে এই ব্ল্যাক রাইস চাষ করেছি। ওই ধান চাষাবাদে কৃষি কর্মকর্তারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। নতুন জাতের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন ভির করতো। কালো ধানগাছের উচ্চতা, পাতা, শীষ, ধান ও চাল সাধারণ ধানের মতোই তবে এর সবকিছুই কালো। জানা মতে ঢাকায় বিদেশি কোম্পানিগুলো এ চাল ৫-৬ শত টাকায় কেজি বিক্রি করলেও স্থানীয় ভাবে তা ৩ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি করতে পাবো। ধান কাঁটার আগেই অনেক কৃষক ধান ক্রয়ে আগ্রহদেখাচ্ছে। আশাকরি আশানুরূপ দামে ভালো লাভবান হবো। গ্রামের সাধারণ কৃষক আল আমিন বলেন, তার এমন সাফল্যদেখে গ্রামের অনেক কৃষক এ ধান চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে। শুনেছি সাধারণ চালের চেয়ে এ চাল বহু পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ। যা চাহিদা দামে ভালো থাকায় আগামীতে আমি নিজেও এ ধান চাষ করবো। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ বনি আমিন খান বলেন,উপজেলায় এই জাতের ধান ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক এক কৃষকের মাঝে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আগামীতেও ব্যাপক হারে কাজ করবো। সাধারণ ধান ১৫ থেকে ১৮ মন বিঘা প্রতি ফলন হলেও ব্ল্যাক রাইস ১৩ থেকে ১৪ মন ফলন পাওয়া যায়। জানা মতে ঢাকায় বিদেশি কোম্পানিগুলো এ চাল ৫-৬ শত টাকায় কেজি বিক্রি করলেও স্থানীয় কৃষকরা তা ৩ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। সাধারণের চালের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হবে কৃষক। এই চালে বৈদেশিক রপ্তানি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যার ফলে কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
×