ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ

প্রকাশিত: ০০:০৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ॥ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমীকরণ

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে সাবরিনা চৌধুরী সদস্য, বন ও পরিবেশবিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান যে উন্নত হয়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হলো দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সেই সঙ্গে নারীর অংশগ্রহণও। কারণ নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে লিঙ্গ সমতার প্রতিচ্ছবি যা একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। এই ৫০ বছরে দেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনীতিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। সংসদে অতীতে শুধু সংরক্ষিত আসনে নারীদের সদস্য দেখা গেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের অবদানে বর্তমানে নির্বাচিত সদস্য ও মন্ত্রীও রয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও আমরা দেখেছি চেয়ারম্যান পদে নারীর মনোনয়ন। প্রতিটি কমিটিতেও নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোতে তার বাস্তবায়ন প্রশংসনীয়। তবে তৃণমূলের কমিটিগুলোতে এখনো তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। তাই সেখানেও সেই সংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যাশা এখনও আমাদের রয়ে গেছে। যা পূরণ হলেই রাজনীতিতে নারীর মূল্যায়ন যথাযথ হবে। সেই সঙ্গে ‘রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ’ বলতে শুধু নারীর অংশগ্রহণ নয়, যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতই এর মূল অর্থ। ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য নারীর অবদান কম ছিল না। তাই ৫০ বছর পর দেশের উন্নয়নে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ছোট করে দেখার কোন কারণ নেই। নারী ঘর ও রাজনীতি একসঙ্গে সামলানোর যোগ্যতা রাখেন। শুধু প্রয়োজন আমাদের ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক চর্চা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান এখনও পিছিয়ে সাদিয়া ইসলাম নিধি ইন্টার্ন ডাক্তার, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ। স্বাধীনতার পর থেকে ছোট্ট বাংলাদেশটা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়েছে, সেই সঙ্গে এগিয়েছে আমাদের নারীসমাজ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, উন্নত হয়েছে জীবনব্যবস্থা। ঘরে বাইরে সর্বত্র তারা বিচরণ করছেন পুরুষের সঙ্গে সমান ভাবে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ঈড়াশোনার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারী শিক্ষার হারের উর্ধগতি। উচ্চমাধ্যমিক ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-ি পার হচ্ছেন নারীরা, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও উচ্চশিক্ষার্থে নারীদের জুড়ি মেলা ভার। নিতান্তই যাদের বাইরে গিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই, তারাও ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসায় এর মাধ্যমে আয় করে সংসারের হাল ধরছেন। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকেই এখনও পিছিয়ে আছে এই দিক দিয়ে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও অনেকের রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব। পশ্চাদপদতার কারণে বাল্যবিবাহ, মাঝপথে পড়াশোনা থেমে যাওয়া এসব যেন অহরহ ঘটছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। মহামারীর সময়ে যে সমস্যাটি হয়ে উঠেছে আরও প্রকট। আমাদের নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও জোর দিতে হবে। পড়ালেখা কিংবা কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে নারীদের জন্য, সর্বোপরি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। নারী ভাল থাকলেই ভাল থাকবে দেশ, এগিয়ে যাবে সভ্যতা। নারী শিক্ষার অগ্রগতি প্রশংসনীয় নাহিদ নেওয়াজ শিক্ষক ও টিভি উপস্থাপক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং এই বাংলাদেশের বর্তমান সকল ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আর এক্ষেত্রে লক্ষণীয় শিক্ষিত ও সচেতন নারীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই নারী শিক্ষার প্রতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ সহযোগিতা। তারই ফলাফল বাংলাদেশের নারীদের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি। ২০১৮ সালে তাই তিনি নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পেয়েছিলেন ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারসিপ এ্যাওয়ার্ড’ জাতিসংঘের ‘৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এ্যাওয়ার্ডও তিনি পান। শিক্ষা অধিদফতরের এ্যানুয়াল রিপোর্ট অন পাবলিক ইন্সট্রাকশন ফর দ্য ইয়ার ১৯৭০-৭১ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তখন মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ছিল ২৮ শতাংশের কিছু কম। বর্তমানে, সরকারের শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী প্রায় ৫১ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও সর্বমোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর ৩৮ শতাংশ ছাত্রী। শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও নারীদের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নে সরকারের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতির যে রূপ আমরা দেখতে পাই তা অধিক প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকারসহ বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীও নারী। শিক্ষার অগ্রযাত্রায় নারী যে সুযোগ পেলে পুরুষের পাশাপাশি একই কাতারে নানা রকম চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে করতে পারে তা আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারীদের ভূমিকা থেকেই স্পষ্ট। নারী শুধু নারী নয়, এক অসীম শক্তির অধিকারী মাতা, কন্যা, স্ত্রী যারা সময় ও সুযোগের মাধ্যমে গড়তে পারে পরিবার, সমাজ ও দেশ। স্বাধীনতার এ ৫০ বছরে বাংলাদেশের নারীরা অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছেন দেশ ও জাতি গঠনে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নারীরা হয়ে উঠবো জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, উজ্জ্বল আইকন। সত্যিকারের মুক্তি মেলেনি আজও সাদিয়া শারমিন, শিল্পী, শিশু সংগঠক শোষণমুক্তির আর এক নাম যদি মুক্তিযুদ্ধ হয়, তবে সে মুক্তি আজও আমাদের মেলেনি! পদক্ষেপের প্রতিটি ধাপেই এক একটি যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছি। একজন মেয়ে হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে চলার যুদ্ধ! পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েও না পারার যুদ্ধ! সত্যি বলতে আমাদের একটা সকাল জরুরী। যে সকাল জীবনকে নিয়ে সুন্দরভাবে ভাবতে শেখায়। একটা গতি লাগবে যে গতিটা শুধু পরিবর্তন নয় সঙ্গে বাস্তবায়নও করতে পারবে। একটা যুদ্ধ আমার ভাষাকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনেছে। আর একটা- আমাকে স্বগর্বে দাঁড়াতে। শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন সকল চিন্তার বাইরে একটাই বিশ্বাস রাখিÑ পারিবারিক সুশিক্ষার সঙ্গে যেদিন দেশ মিশে থাকবে, তখন একদিন না একদিন শিশুরা দেশকে অনুভব করবেই। পরিবর্তন আসবেই।
×