ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ

নতুন করোনা ওমিক্রন কি

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

নতুন করোনা ওমিক্রন কি

করোনার নতুন এক ভয়ানক ধরন আবির্ভূত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয় বতসোয়ানা, হংকং, ইসরাইল, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে পাওয়া গেছে এই ধরনটি। বিশ্ব জুড়েই নতুন ধরনটি নিয়ে বিশাল এক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ধরনটির নাম দিয়েছে ওমিক্রন। প্রশ্ন জেগেছে করোনার এই নতুন ধরনটি কি অতি বিক্রম? ভাইরাস বদলে ফেলে নিজেকে : আরএনএ ভাইরাসের এক বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুব দ্রুত বদলে ফেলে নিজেকে। নতুনভাবে আক্রমণ রচনার জন্য নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হয়। করোনা যেহেতু আরএনএ ভাইরাস সেজন্য এরা প্রতিনিয়ত বদলে ফেলছে নিজেকে। নূতন রূপে আবির্ভূত ধরণটি কখনো সখনো হতে ভয়ানক আগ্রাসী। এবারের নতুন ধরনটির নাম ওমিক্রন। নতুন যেই ধরনটি এখন পাওয়া যাচ্ছে তার ভয়াবহতা কেমন হবে তা এখন বৈজ্ঞানিক মহলে বিরাট এক আলোচ্য বিষয়। ভাইরাস যত ছড়াবে ততই বদলে ফেলবে তার চেহারা-চরিত্র। এটাকে বলে মিউটেশন। এই মিউটেশন যত বেশি হবে ততই সম্ভাবনা তৈরি হবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন তৈরির। চীনের উহানে প্রাপ্ত বন্য ভ্যারিয়েন্ট নিজেকে বদলে ফেলেছে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এর মাঝে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তীব্র মাত্রায় ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে বিশ্বকে। করোনার নতুন চেহারা : ওমিক্রন নামক নতুন ধরনটি অন্তত ৫০টি জায়গায় নিজের রাসায়নিক গঠন বদলে ফেলেছে। ভাইরাসের বাইরের দিকে কদম ফুলের কেশরের মতো যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে সেখানে অন্তত ১০টি পরিবর্তন করে ফেলেছে ভাইরাসটি। মানব কোষের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের। নতুন ধরনটির এই বিশেষ প্রোটিনেও পরিবর্তন ধরা পড়েছে। সেজন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ধরনটি দ্রুত মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আরেকটি ভয়ের জায়গা হলো এই ধরনটি রোগ প্রতিরোধ প্রাচীর টপকে যেতে পারে। সেজন্য ভ্যাকসিন দেয়ার পরও এই ধরনটি মানবদেহে বসত গড়তে পারে। বিখ্যাত তিন টিকা ফাইজার, এস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এ্যান্ড জনসন নেয়া ব্যক্তিদের এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে। এই ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেছে। সুতরাং নতুন ধরনটি কাউকে ছাড়া দিবে বলে মনে হচ্ছে না। লক্ষণ : নতুন এই ধরনটি নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা হয়নি। সুতরাং এটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে এই ধরনটির নতুন দু-একটি লক্ষণের মাঝে তীব্র শরীর ব্যথা, অত্যধিক ক্লান্তি অন্যতম। গলা ব্যথা, শুকনা কাশি, অরুচি এগুলো তো আছেই। তবে নতুন ধরনটির আক্রমণে ঘ্রাণ শক্তি উবে যাওয়ার প্রবণতা কম। করণীয় : তবে এখনও নতুন ধরনটির পূর্ণাঙ্গ পাঠ নেয়া সম্ভব হয়নি। আর গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্য আর বাস্তব জগতের আক্রমণ এক নাও হতে পারে। সেজন্য আমাদের ভড়কে গেলে চলবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে বেরুলে মেডিক্যাল মাস্ক পরিধান করতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ভ্যাকসিন নিতে হবে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণ ঠেকাতে না পারলেও করোনার তীব্র আক্রমণের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করবে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বিদেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখতে হবে। অবশ্যই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরখ করে নিতে হবে করোনার। মনে রাখতে হবে বিশ্ব এখনও করোনা মুক্ত হয়নি পুরোপুরি। লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, (২য় তলা) ফার্মগেট মোবাইল: ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫
×