ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের সীমানা প্রাচীর ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের সীমানা প্রাচীর ঝুঁকিতে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী॥ উত্তরাঞ্চলের ব্যস্ততম নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের সীমানা প্রাচীরের নিরাপক্তা বেষ্ঠনী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবাধে মানুষজন,গরু ছাগল ও শিয়াল প্রবেশ করছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বিমানবন্দরটির রানওয়ে। জানা যায়,দেশের অভ্যন্তরিন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম সৈয়দপুর বিমানবন্দর। প্রতিদিন ১৬টি ফ্লাইট ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে চলাচল করছে। বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজও চলছে। আজ সোমবার সরেজমিনে জানা গেছে বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরের নিচের মাটি সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। প্রাচীরের ওপরে যে কাটাতার দেয়া ছিল তাও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দিনের বেলা কুকুর আর রাতে আশপাশের জঙ্গল থেকে শিয়ালসহ বিভিন্ন জীবজন্তু রানওয়েতে প্রবেশ করে। স্থানীয় অনেকে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে ঘাসও কাটেন। নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হলেও এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত ৩০ নবেম্বর কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে বিমান বাংলাদেশের একটি উড়োজাহাজের ডানার সাথে ধাক্কা লেগে দুটি গরুর মৃত্যু হয়, অল্পের জন্য ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান ফ্লাইটের ৯৪ জন আরোহী। সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তর,পশ্চিম ও দক্ষিন প্রান্তে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সাত বছর না যেতেই ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট প্রাচীরের ১০০ ফুট অংশ ধসে পড়ে। ফাটলও দেখা দেয় বিভিন্ন অংশে। পরবর্তীতে সংস্কার করা হলেও সীমানা প্রাচীরের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমপাশের নিচে মাটি সরে গিয়ে যেন সুড়ঙ্গ পথ সৃস্টি হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের বেশ কিছু জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। ফলে স্থানীয়রা সহজেই মই বেয়ে বা খড়ের গাদার ওপর দিয়ে দেয়াল টপকে বিমানবন্দরে ঢুকতে পারে।প্রাচীরের পাশে খড়ের গাদা। গাদার ওপর দিয়েও অনেকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৪-এর অধিনায়ক জয়নুল আবেদীনের পক্ষ থেকে এ বিমানবন্দরের বিষয়ে গত ২৬ অক্টোবর একটি চিঠি দেয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর ও সিভিল অ্যাভিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এর পাঠানো ওই চিঠিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। অধিনায়ক জয়নুল আবেদীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরের নিচের মাটি সরে যাওয়া এবং ড্রেন উন্মুক্ত থাকার কারণে প্রতিদিন বাইরের লোকজন ভেতরে প্রবেশ করে ঘাস কাটে। যে কোনো সময় দুষ্কৃতিকারীরা রানওয়েতে ঢুকে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা প্রয়োজন। এমনকি বিমানবন্দর এলাকার চারদিকে ও রানওয়েতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই। সীমানা প্রাচীরের নিচে ফাঁকা ও চারপাশে জঙ্গল থাকায় বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় শিয়াল বা যে কোনো বন্যপ্রাণী দ্বারা উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সেন্ট্রি পোস্ট ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় যাত্রীদের লাগেজসহ মালামাল আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাড়াতে হবে পার্কিং এলাকায় টহল ও ভিআইপি গেটসহ প্রবেশ মুখের নিরাপত্তা। সিভিল অ্যাভিয়েশনের সিসি ক্যামেরা ভাগাভাগিসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ও সমন্বয়ও জরুরি। সুত্র মতে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তায় বর্তমানে ১২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত আছেন। তাদের মধ্যে আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) ৫৮ জন, আনসার ৪৭ জন ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের ১৯ জন। নিরাপত্তা প্রাচীরের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির হওয়ার কথা স্বীকার করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপলব কুমার ঘোষ বলেন, নিরাপত্তার জন্য এখানে জনবল কম। আরও ৩৬ জন আনসার সদস্যের চাহিদা জানানো হয়েছে। শিগগিরই প্রাচীরের সুড়ঙ্গ বন্ধ করাসহ নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
×